ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা নজরুল

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলা সন্দেহজনক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২২ অক্টোবর ২০২৪

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলা সন্দেহজনক

নজরুল ইসলাম খান

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলা সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এ বিষয়টা দুশ্চিন্তার কারণ কেন হচ্ছে? এটা সরকারের দায়িত্ব খোঁজ নেওয়া এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। তবে যিনি পালিয়ে গেছেন তাঁর পদত্যাগ করা বা না করায় কি আসে যায়। 
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন জেলখানায় যাই এবং যেখানে রাখা হয় সেই ডিভিশন ওয়ার্ডটার নাম চম্পাকলি। যদিও ওই কম্পাউন্ডে চম্পা ফুলের কোনো গাছ দেখিনি। আমরা সেখানে থাকার সময় একটি রুমের সামনে একজন সাবেক কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে একটি টেলিভিশন রাখা হয় যেটাতে শুধু বিটিভি দেখা যায়, আমরা সেখানে বসে দেখলাম যে, আমাদের যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি তার পাশে তিন বাহিনী প্রধানকে নিয়ে বলছেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। 
বিএনপি নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজে যখন জাতির উদ্দেশে বলেন, তিনি বাহিনীর প্রধানকে পাশে দাঁড় করিয়ে যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। তারপর এ নিয়ে কোনো কথা থাকে? আর কোনো কথা থাকে না তো। এরপর আমরা দেখলাম, পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বললেন যে, উনি নাকি পদত্যাগ করেননি। তারপর দেখলাম শেখ হাসিনা নিজে এক টেলিফোন কনভারসেশনে বলছেন যে, যেভাবে পদত্যাগ করার কথা আমি ওইভাবে পদত্যাগ করিনি। তার মানে পদত্যাগ করেছেন তিনি। যেভাবে করার কথা ওইভাবে করেননি। তাহলে পদত্যাগ না করার আর তো প্রশ্ন থাকছে না।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা স্থায়ী বা অস্থায়ী এটা কোনো কথা নয় তাদের দায়িত্ব হলো জনগণের স্বস্তি নিশ্চিত করা। কাজেই আমরা অনুরোধ করব সরকারের কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন। তবে বর্তমান সরকারের যতটা শক্তি থাকা দরকার ততটা শক্তি নেই। প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশের পূর্ণাঙ্গ শক্তি সরকার প্রয়োগ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই বলে এই দলের লোকেরা দেশে নেই, ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে নেই, তাদের সমস্যা সৃষ্টি করার সক্ষমতা নেই সেকথা বলা ভুল। তারা আছে এবং নানাভাবে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্যায় দমনের দায়িত্ব তো ফাইনালি সরকারের ওপরে। আমরা সহযোগিতা করতে পারি কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ হয়ে অন্যায় দমন করতে পারি না। আমরা অনুরোধ করব সরকারকে খুব দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক যাতে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে, জিনিসপত্রের দাম যেন স্থিতিশীল হয়। 
নজরুল ইসলাম খান বলেন, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইচ্ছা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমরা জানি বহু বাস-ট্রাকের মালিক আছে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছে পরিবর্তনে। যে কোনো একটা রাস্তায় একটা বাস বা ট্রাক কাত করে রেখে দিলেই একটা বড় যানজট সৃষ্টি হতে পারে এবং জনগণ অসন্তুষ্ট হবে তাতে। আমাদের সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে। নজরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে দুর্গাপূজা হয়ে গেল। ওই সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই মিলে এটাকে প্রতিরোধ করা গেছে। যেসব সমস্যা হয়েছে আমরা বিশ্বাস করি যে, উপযুক্ত তদন্ত করে কঠোর বিচার করা উচিত, যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ এরকম অপরাধ করার সাহস না পায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেশ পুনর্গঠন করতে হলে অতিদ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা যারা রয়েছেন তারা অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং ভদ্র। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি এবং চেতনা দিয়ে দেশ শাসন করা অন্য জিনিস। এখানো হয়তো তারা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, যেটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, তারা ততটুকু সংস্কার করতে পারবেন। ইতোমধ্যে অনেক কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো হয়তো কিছুটা সুবিধা আমাদের দেবে।

কিন্তু রাজনৈতিক দলের যদি কোনো মতামত না থাকে তাহলে তারাও কিন্তু বিভ্রান্ত হবেন। তখন তারা সঠিক সুপারিশমালা দিতে পারবেন না। সেজন্য সমস্ত সংস্কার হাতে না নিয়ে আজকে দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় তাহলে অতিদ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া আপনারা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হবেন। কিন্তু আমরা আশা করি আপনারা সফল হবেন। কারণ আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক। ছাত্র-জনতা যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, মানুষের সততা, নৈতিক চরিত্র ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে। এর সবকিছু ফিরে আসুক এটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, এখন দেশ ভালো নেই। ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ শাসন করেছে।

এই ১৫ বছরের শাসনে বাংলাদেশের মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে শুরু করে নৈতিক চরিত্রসহ প্রতিটি জিনিস তারা শেষ করেছে। প্রতিটি জায়গায় মানুষের নৈতিক চরিত্র বলতে কিছু নেই। এখন দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথা বলছেন। তিনি তো ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন দোসর। তাদের তো শপথ বলতে কিছু নেই। তারা একটা শপথই বোঝে আর সেটি হলো, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং লুটপাট করে খাওয়া। পার্শ্ববর্তী দেশে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন। 
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ প্রমুখ। 

তারেক রহমানের নামে করা মামলাগুলো কেন প্রত্যাহার হচ্ছে না?-রিজভী ॥ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে করা মামলাগুলো এখনো কেন প্রত্যাহার করা হচ্ছে না এমন প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত  ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
রিজভী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনও তারেক রহমানের নাম জড়াতে পারেননি। এই মামলা ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। তারপরও তার বিরুদ্ধে মামলা এখনো প্রত্যাহার হচ্ছে না কেন? 
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনাদের অন্তরের ভাষা আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। ছাত্র-জনতার তুমূল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন দিয়েছি। এই সমর্থনের পরও তারা যদি আলো ছায়ার মধ্যে দুলতে থাকে তাহলে তো সামনের দিকে একটা বিপজ্জনক বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সুতোর টান অন্য কোথাও থেকে আসছে কি না সেটা জনগণ জানতে চায়। আমরা এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। 
রিজভী বলেন, একদিন শুনলাম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছে, তার ক’দিন পর শুনলাম যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে ঘুরাফেরা করছেন। আবার শুনলাম তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার দুই-তিন দিন পরে শুনলাম তিনি গ্রেপ্তার হননি। জনগণের সামনে এই লুকোচুরি কিসের জন্য? জনগণ জানতে চায়।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাটে সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত মাত্র ২৫২ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাদ দেওয়ার কথা ৮০৩ জনকে। তাদের কেন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কারণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, জয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, তাদের টাকা পাচারের বিরুদ্ধে যারা লিখবে এই পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের অত্যাচার করবে। তাদের ওপর অবিচার করবে। তাদের নির্মমভাবে প্রহার করবে। 
রিজভী বলেন, উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাটে সরকারি আইন অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪২ জনের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকারই ৩২ জন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিশ্বজিতের মতো অসংখ্য মানুষকে কুপিয়ে খুন ও গুম করার রাজনীতি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা আউয়াল প্রমুখ।

×