বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বাজারে চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস ও ডিমসহ সকল নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষে এ দাবি জানান দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন ডিজেল-পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি না পায় সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটি মহল নানা খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে. তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আবাসন পুনর্নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুতের মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাখাতগুলোর মানোন্নয়নে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
রিজভী বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বন্যা ও প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ও প্রবল বর্ষণে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় যেভাবে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গিয়েছিল সেটি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষক ও খামারিদের অতি দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ও তাদের পরিবারের দুরবস্থার বিষয়টি নিয়ে সরকারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। কৃষকদের জন্য সার, কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
রিজভী বলেন, বন্যাজনিত সংকটে শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্যা-পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সরকারকে কর্মতৎপর হতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে, শুধু নেত্রকোনা জেলার পাঁচ উপজেলায় ২০ হাজার ৯০০ ৯ হেক্টর জমির রোপা আমন খেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির।
এতে ৫ হাজার ৩২০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। প্রায় ১ হাজার ৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার ডুবে গেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৮ কোটি টাকা। শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী। দাবিগুলো হলো- বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা প্রনয়ন করে পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত তাদের তাদের সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা, পরবর্তী ফসল উৎপাদনের খরচের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান ও বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও তেলের ব্যবস্থা করা। রবিশস্য উৎপাদনের জন্য তাদের মধ্যে রবি শস্যের বীজ প্রদান করা।
বন্যার পানিতে যাদের মৎস্য, হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর খামার বিনষ্ট বা ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের সঠিক তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা। এ ছাড়া বন্যার পানিতে যাদের বাড়িঘর আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের তালিকা তৈরি করে ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা। নদীর বাঁধ ভেঙে যেসব গ্রাম-পাড়া-মহল্লা বিলীন হয়ে গেছে, সেসব স্থানে বসবাসকারীরা বর্তমানে উদ্বাস্তু হয়ে গেছে, তাদের সরকারি খাস জমিতে বা আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা।
যেসব বাঁধ, রাস্তা, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ও ধ্বংস হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা। বন্যার পানিতে যেসব ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাসামগ্রী বিনষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাসামগ্রীর জন্য সহায়তা প্রদান করা। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দেওয়া।
পরে রাজধানী বাড্ডায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ও সচেতনতায় বিএনপির পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতির জন্য ‘ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট’, এখন তাকে পিএইচডি করার জন্য ভারত নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে প্রতিদিন চার-পাঁচজন করে লোক মারা যাচ্ছে ঢাকা মহানগরে, এটি যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে হতো তবে সে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করত।
রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে যদি বাকশাল না হতো, জাসদের নেতাকর্মীদের যদি খুন করা না হতো, সিরাজ শিকদারকে যদি হত্যা করা না হতো, সব দল নিষিদ্ধ করে একটি দল করা না হতো, টানা ১৬ বছর যদি শেখ পরিবারের একক রাজনীতি না থাকত, তবে বাংলাদেশের রাজনীতি গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করেই হতো। তখন সব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র চর্চা করত, আর গণতন্ত্র চর্চা হলেই সে রাজনীতি হতো মানব সভ্যতার জন্য কল্যাণকর।
আগের সরকারের সময়ের সিন্ডিকেটই এখনো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে- দুদু : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে সিন্ডিকেট আগের সরকারের সময় ছিল সে সিন্ডিকেট এখনো আছে এবং তারাই দ্রব্যমূলের নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত ‘জাতীয় নির্বাচন, নাগরিক ভাবনা ও জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আগের সিন্ডিকেটই যদি বহাল থাকে তা হলে পরিবর্তন হলো কোথায়? এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট রাখা যাবে না। ফ্যাসিবাদ এবং গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য থাকতে হবে।
দুদু বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান যিনি ছিলেন তিনি হলেন শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়েছেন, তার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পালিয়েছেন। তার কর্মীরা যারা প্রশাসনে ছিলেন তারা সেভাবেই আছেন। সচিবরা সেভাবেই আছেন। আমার দেখা মতে দুদকেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। শেখ হাসিনা যেখানে যেভাবে সেটাপ করেছেন সবকিছু সেভাবেই আছে। আগের সরকার এবং বর্তমান সরকারের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকতে হবে। কারণ, ফ্যাসিবাদ এবং গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
দুদু বলেন, আমরা এ সরকারকে সমর্থন দিয়েছি ভালো কাজ করার জন্য। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার জন্য যেখানে যা সংস্কার করা দরকার করতে হবে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো ভালো কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী পরিষদের আহ্বায়ক বাবলু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান প্রমুখ।