ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

সংলাপ নিয়ে হতাশ জাপা

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সংলাপ নিয়ে হতাশ জাপা

জাতীয় পার্টি

রাষ্ট্র সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার চলমান সংলাপে শেষ পর্যন্ত ডাক পেতে পারেন- এমন একটা আশা ছিল জাতীয় পার্টির নেতাদের। তবে শেষ পর্যন্ত এবারের সংলাপে ডাক পায়নি ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ খ্যাতি পাওয়া দলটি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও পড়া লাগতে পারে বিপাকে। রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সংলাপ শুরু হয়েছে। শুরুতে সংলাপে অংশ নিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের নেতারা।  

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটি প্রধান উপদেষ্টার চতুর্থ দফা সংলাপ। সবশেষ সংলাপ হয়েছিল গত ৫ অক্টোবর। প্রথম দিকের সংলাপে জাতীয় পার্টি সংলাপে ডাক পেলেও এবার ডাক পায়নি। সংলাপে ডাক না পাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার হয়ত জাতীয় পার্টির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না, সে কারণে আমাদের সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। এরপর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও বেকায়দায় পড়ে। জেলে যেতে হয় রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর মতো নেতাদের। তবে শুরুতে আওয়ামী লীগকে ‘ক্ষমতার স্বাদ পাইয়ে দেওয়া’ জাতীয় পার্টির প্রতি কারও তেমন নজর না গেলেও কিছু  দিন গড়াতেই ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে জাতীয় পার্টির নাম সামনে আসতে থাকে নানা মহল থেকে। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির বিচার দাবি করেছে, তেমনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও অভিন্ন দাবি জানিয়েছেন। এমনকি জাতীয় পার্টি কীভাবে সংলাপে ডাক পায় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোনো কোনো সমন্বয়ক। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত দুজন সমন্বয়কের বক্তব্য জোরালো ভূমিকা রাখে। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সম্প্রতি নিজ নিজ ফেসবুক পেজে জাতীয় পার্টি নিয়ে পোস্ট দেন। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল জাপা।

হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।’ আরেক সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম লিখেন, ‘জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালালদেরকে প্রধান উপদেষ্টা কিভাবে আলোচনায় ডাকে?’ 

সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ আসার পর অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পার্টিকে সংলাপে না ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে জাতীয় পার্টির দাবি তারা স্বৈরাচারের দোসর নয়। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনে নিয়েছে জোর করে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তারা এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছে।

গত ১২ অক্টোবর রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সময় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এজন্য আমাদের আওয়ামী লীগের দোসর বলা হচ্ছে। কিন্তু আপনারা জানেন, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নির্বাচনে আমরা অংশ নিতে চাইনি। কিন্তু আমার অফিস এবং আমাকে এক প্রকার জোর করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে। এমন করেই আমার ভাইয়ের সময়ও হয়েছে। ২০১৪ সালে আমার ভাই বলেছিল বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমরা নির্বাচনে যাব। কিন্তু বিএনপি যখন গেল না, তখন আমরা নির্বাচন করতে চাইনি। আমার ভাইকে সিএমএইচে রেখে তার এবং ভাবিসহ কয়েকজনের মনোনয়ন বৈধ করে নির্বাচন করল। সেই সরকারে আমাকে মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছিল আমি নিইনি। সব মিলিয়ে আমাদের জাতীয় পার্টির একটা অংশ নির্বাচন করেছে। এই নির্বাচন নিয়ে রংপুরেও আন্দোলন হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের দলের একটা ঐতিহ্য আছে। পুরানো দল। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চেয়েছি। সহযোগিতা করে আসছিলাম। কিন্তু তারপরও আমাদের যদি রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ের আলোচনায় না ডাকা হয়, দূরে রাখা হয়, সে বিষয়ে আপত্তি নেই। তবে আমাদের নিয়ে বাইরে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কতগুলো অভিযোগ করা হচ্ছে এবং শাস্তিস্বরূপ আমাদের ডাকা হচ্ছে না। এটি আমাদের বিব্রত করছে।

শহিদ

×