ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আলোচনায় ভার্চুয়ালি তারেক রহমান

নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্যের গরমিল সন্দেহ তৈরি করছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্যের গরমিল সন্দেহ তৈরি করছে

তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনমনে সন্দেহ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, জনগণ এ সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ও গণমুখী ভূমিকায় দেখতে চায়। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কার ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। যে কোনো সংস্কারে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলে তা ভালো ফল দেয় না। আওয়ামী লীগের দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে সরকারের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দেশের নি¤œœœ ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তাই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাস্তব ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। মাফিয়া সিন্ডেকেট ভাঙতে প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে প্রত্যাশিত গণতন্ত্রে উত্তরণ হোঁচট খেতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে গণমুখী হতে হবে। 
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে কোনো উপকার মিলবে না। কারণ, তারা বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর মানুষ বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। এখন মাফিয়াচক্রের কবল থেকে বঞ্চিতরা অধিকার ফিরে পেতে চায়। শহীদের রক্তের দাগ এখনো মুছে যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। তবে সরকারের কিছু সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক নেতাকর্মী ভিন্নমতের অনেকের সম্পত্তি দখল করেছিল। জবরদখলকারীদের কাছ থেকে সেসব উদ্ধারে সরকারের উদ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব ও কঠোর পদক্ষেপ  নেওয়া প্রয়োজন। মানুষকে আধপেটা রেখে কোনো কথাই গেলানো সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে মাফিয়া চক্রের তৈরি করা বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়ত একটু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। 
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অর্জন বিপন্ন হবে। তাই রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত কাজ করতে হবে। জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে হতাহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। সরকারকে বলব, জিনিসপত্রের দাম কমাতে পদক্ষেপ নিন। সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। 
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরচারের আমলে তাদের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-জায়গা, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল। তারা সেগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়েছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনই রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য সবাইকে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। 
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে স্বাধীন দেশে আমরা আছি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্র-জনতা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়েছেন। আজকে তারাই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তাদেরকে দায়িত্ব বোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির হাল ধরেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া হাল ধরেছিলেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে মানুষের কাছে নিয়ে যান। এই যে ত্যাগের ধারাবাহিকতা সেটি নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা উচিৎ। জিয়াউর রহমান মাত্র ৪ বছরে দেশের যে পরিবর্তন এনেছিলেন পরবর্তীতে ৪০ বছরেও অন্যরা আনতে পারেনি। 
সভাপতির বক্তব্যে জেডআরএফের সভাপতি ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। জেডআরএফ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে এ সংগঠন সেবামূলক কাজ করছেন এটি প্রশংসনীয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। জেডআরএফের কার্যক্রমকে আমি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। স্বৈরাচার সরকারের পতন আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সারাদেশে জেডআরএফের স্বেচ্ছাসেবীরা অভাবনীয় কাজ করেছে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। জেডআরএফের রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র নীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, রাষ্ট্রদূত এসএম রাশেদ আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি ও পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাইফুল আলম নীরব, গোলাম সারওয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী প্রমুখ।

×