ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সমস্যাকে রাজনৈতিক মূলধন করে ফেললে সেটির সমাধান হবে না। ঐক্যবদ্ধ থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।  যাদের মাথা বিক্রি করে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয় সেই লোকগুলো বেশি কষ্ট পায়। নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর সিমেন্ট ক্রসিংয়ের সীম্যান্স হোস্টেল ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইদানিংকালে কিছু ধর্মের সওদাগর বের হয়েছে। এ সওদাগরী হচ্ছে ধর্মীয় বিষয়কে সামনে এনে বিভেদ সৃষ্টি করে দেওয়া। এতে তাদের দুই-তিনটি লাভ আছে। এক হল সে (সওদাগর) নেতা হয়ে গেল, একটা ধর্মের একটি অংশের নেতা হয়ে গেল। পত্র-পত্রিকায় এমন বক্তব্য দিল যেটা সত্যের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয় হল-এদের (সওদাগর) কারণে যে একটি জাতি কতবড় বিপদের সম্মুখীনের দিকে তারা ঠেলে দিচ্ছে এ লোকগুলো কিন্তু দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না। একটা জাতিতে বিভক্তি করে তার নেতৃত্ব নিতে চায়, লাভবান হতে চায়। সত্য মিথ্যার বালাই নেই।

বাংলাদেশে যে কোনো সমস্যা নেই এটা আমি বলব না- উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে সমস্যা আছে। অনেক সমস্যা আছে । সমস্যার সমাধান না দিয়ে সমস্যাকে আপনি রাজনৈতিক মূলধন যদি করে ফেলেন সেটা কিন্তু আর সমাধান হবে না। সমস্যাকে সমাধান করতে হবে, সেদিকে কথা বলতে হবে, চেষ্টা করতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু সমস্যাকে রাজনৈতিক মূলধন বানিয়ে কোনো একটি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাওয়া এবং নেগেটিভ তৈরি করা হলে সমাধান হবেই না। বরং বিপদ বেশি হয়। যাদের মাথা বিক্রি করে সেই ধরনের বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়, সেই লোকগুলো বেশি কষ্ট পায়। আর ওই নেতা (সওদাগর) সে তার চরকা ঘুরাবে আর লাভবান হবে। যে লোকগুলোকে ব্যবহার করেছে, তারা কিন্তু কষ্টে পড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমস্যাকে মূলধন করলে তা আরও গভীরে যাবে। নতুন বাংলাদেশে যে আকাক্সক্ষা ও ভাবনা জন্মেছে সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। বিএনপির ৩১ দফা যে সংস্কার প্রোগ্রাম আছে সেখানে সব সমস্যা ও সমাধানের কথা আছে। সেখানে ধর্ম, অর্থনীতি, সামাজিক, বিচারসহ সবকিছুর সমাধান আছে। এখন কেউ যদি সেসব সমস্যার সমাধান এখন দিতে পারে, ভাল। আমরা তো এ সংস্কারের কথাই বলছি। আর এগুলোর পরে যদি কিছু বাকি থাকে সেগুলো আমরা করব। আমরা বলছি, জাতীয় সরকার গঠন করার জন্য। একা কোনো কাজ করলে দাম থাকে না। আমরা জানিয়েছি, সব দল মিলে সরকার গঠন করব। যে সংস্কারগুলোর কথা বলছি, সে সংস্কারগুলো ঐক্যবদ্ধ জাতিকে নিয়ে করব। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব সংস্কৃতির মানুষকে নিয়েই সমাধান দিব। যাতে কেউ এর বাইরে না থাকে।

উপস্থিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সকলের উদ্দেশ্যে বিএনপির অন্যতম শীর্ষ এ নেতা বলেন, আমরা জাতিকে কমিটমেন্ট দিয়েছি, জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এখান থেকে সরার কোনো সুযোগ নাই। তাই আমি সকলকে অনুরোধ করব, আপনারা সকলকে অনুরোধ করব, কে কি রাজনীতি করবেন সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। চিন্তা-ভাবনার মিল থাকতে হবে। আমরা সকলেই একই বিষয় চাই। বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রদায়ের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে সব অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়েছে। আপনারা অনেক এগিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নাই। এভাবে যদি বিভিন্ন ধর্ম-মত সবাই যদি আমরা জায়গায় আসতে পারি, তাহলে জাতীয় সংকট থেকে মুক্ত হয়ে , আবার স্বাধীন বাংলাদেশে-যে জন্য যুদ্ধ হয়েছে, আমরা সেটাকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করব। কোনো এক ব্যক্তিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য না, কোনো একদলকে আজীবন রাখার জন্য না; কোনো এক গোষ্ঠীকে দেশ লুটপাট করার জন্য না। কোনো ব্যক্তি, যারা জাতিকে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের জন্য এ নতুন বাংলাদেশ না।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিশাল পরিবর্তন এসেছে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারছে। তারা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। তারা বিভক্তির বাংলাদেশ দেখতে চায় না। মানুষকে ভুল পথে চালিয়ে বিভ্রন্তি ও বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তাদেরকে দেখতে চায় না। তারা দেখতে চায় একটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। যে সমস্ত রাজনীতিবিদের মাথায় এটা ঢুকে নাই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নাই। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

রিয়াদ

×