ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

লেবার পার্টির আলোচনায় মেজর হাফিজ

নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট

লেবার পার্টির গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা সবসময় বলেছি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে লেবার পার্টি আয়োজিত গণঅভ্যুত্থানে জনআকাক্সক্ষা: রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা, শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে গুম কমিশনের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব।  
হাফিজ বলেন, বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে জনরায়ে, জনগণের ইচ্ছায়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আমরা ধীরে ধীরে হতাশ হচ্ছি। প্রফেসর ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, সারাবিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ফেস, ওনার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আমরা এই মুহূর্তে পেতাম না। তিনি ক্ষমতায় থাকতেও চান না, আগেও তাকে অফার করা হয়েছিল, থাকেননি।

এখনো যে তিনি খুব এনজয় করছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু একটা কথা বলতে হচ্ছে, ওনার টিম সিলেকশনটা ঠিক হয়নি। তিনি যাদের সঙ্গে নিয়েছেন, তাদের অনেকের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা আছে। প্রকাশ করতে হয়তো পারেন না কিন্তু ভাবভঙ্গিতে এমনই মনে হয়।
সংস্কারের জন্য কত সময় লাগতে পারে সরকারকে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ছয়টি যে কমিশন করা হয়েছে, এর প্রজ্ঞাপন করতেই ৬ দিনের বেশি সময় লেগেছে, যেটা দুই দিনের বেশি লাগার কথা না। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পতিত শক্তি আবার ফিরে আসতে চায়। আনসার বাহিনী পর্যন্ত ক্যু করতে চায়, এমনই দুর্বল একটা সরকার।

মেজর হাফিজ বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে বাহিনীগুলোর প্রধানদের আরও দশ হাজার মানুষকে হত্যা করতে বলে গিয়েছেন। মনে হয় মানুষ যেন পোকামাকড়ের চেয়েও অধম হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা যদি আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করেন, তাহলে আমি আমার দল পরিবার নিজের জন্য কিছুই চাইব না। আমি শুধু একটা জিনিসই চাই, এই আওয়ামী লীগ যেন আর ফিরে না আসে বাংলাদেশে।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, প্রফেসর ইউনূস একেক জন উপদেষ্টাকে চারটা-পাঁচটা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের কোনো অভিজ্ঞতাই তো নেই। এ ব্যাপারে তাকে চিন্তা করতে হবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ভালোদের নিয়ে দায়িত্ব দেন। দরকার হলে যে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের থেকে আরও লোক নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিমে অতীতে খেলে এসেছেন তাদের আর উপদেষ্টা পরিষদে আমরা দেখতে চাই না।
হাফিজউদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ সরকার অনেক কথা বলে কিন্তু একটা কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না নির্বাচন কবে হবে। নির্বাচন কমিশন কবে গঠন হবে? অরাজনৈতিক এবং বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা দ্রুত করা যায়।

আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মনে করেছিলাম সুন্দর একটা দেশ আমরা পাব। গণতন্ত্র চিরদিন থাকবে দেশের বুকে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানবিক মর্যাদা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু যতই দিন গেছে ততই আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরে সরে গিয়েছে। আমরা পেয়েছি একটা একদলীয় রাষ্ট্র বাকশাল।
নির্বাচন ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে হাফিজ বলেন, নির্বাচনে কেউ যেন টাকা দিয়ে ভোট প্রভাবিত করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় সংসদ এখন কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। তা বন্ধ করতে হবে। একজন স্কুল শিক্ষকও যেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারেন সে পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। 
হাফিজ বলেন, আগস্ট বিপ্লবের আরেকটা জিনিস আমরা দেখতে পাব, যে সরকারই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে তার মাথার মধ্যে আগস্ট বিপ্লবের কথা থাকবে। তারা ইচ্ছা করে যে আগের মতো লুটপাট করে যাবে তা সাহস করবে না। বিএনপি হোক, জামায়াত হোক আন্দোলনের যে অভিজ্ঞতা, তা প্রত্যেকের মাথায় থাকবে।
আলোচনা সভায় রাষ্ট্র মেরামতের জন্য দলীয় ২৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলবার্ট পি কস্টা, জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব- সালাউদ্দিন : গুম কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে কমিশনের গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি কমিশন প্রধানকে আমাকে গুম করার ঘটনা জানিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব এ কথাও জানিয়েছি। আরও বলেছি দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। 
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি গুম কমিশনে উপস্থিত হয়েছিলাম, যাতে করে আমার গুমের বিষয়টা অফিসিয়ালভাবে লিপিবদ্ধ করাতে পারি। আমার গুমের বিষয়ে আদ্যোপান্ত সাংবাদিকরা সবই জানেন। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে আমাকে উত্তরার একটি বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নেওয়ার পর ৬১ দিন গুম ছিলাম। এরপর আমাকে অন্য একটি দেশে পাচার করে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গুম-খুনের মূলহোতাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দেশ থেকে চিরদিনের জন্য গুম-খুনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এটি জাতির দাবি, ৫ আগস্টের বিপ্লবের দাবি, শহীদের রক্তের দাবি। গুম কমিশন এ বিষয়গুলো তদন্ত করে তুলে ধরবে। এ বিষয়ে তাদের কতটুকু এখতিয়ার আছে, আমার জানা নেই। 
সালাউদ্দিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জিয়া আহসান, বেনজীর এবং তারিক সিদ্দিকী গুম-খুন করেছেন, এরাসহ গুম-খুনের মূলহোতা যারা তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, যারা পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে আছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। কিভাবে আনবে সেটি আইনে আছে।

প্রশাসনে এখনো অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে- রিজভী : প্রশাসনে এখনো অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার দুপুরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়াতে রাজধানীর উত্তরায় লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেন গণকবরে পরিণত করেছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। এ সরকারের আমলে মহামারিতে একজন লোকও যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। 
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ রেজা কাকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, দলের নেতা এস এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ। 

আওয়ামী লীগ আমলের মামলা প্রত্যাহারের দাবি দুদুর : আওয়ামী লীগ আমলে ১৬ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে যেই মামলাগুলো হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির সকল নেতার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
দুদু বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি নির্মম নির্যাতন করেছে ফ্যাসিবাদী  শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি  কারাগারে ছিলেন। খালেদা জিয়া তার ২টি মাসুম বাচ্চা নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে জেলে বন্দি ছিলেন।

আজ পর্যন্ত তিনি শত শত মামলা মাথায় নিয়ে আছেন। কিসের জন্য? দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য। এই মানুষটা তার পুরো জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য। দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। 
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, কৃষক দল নেতা এসকে সাদি প্রমুখ।

×