ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

আমু ও কামরুলসহ দুই মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

আমু ও কামরুলসহ দুই মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

আমির হোসেন আমু  ও  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এছাড়া লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু ও নেত্রকোনার মদনপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ আব্দুল হান্নান তালুকদারের পৃর্থক অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু তার নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা-প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদফতরসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ থেকে অনৈতিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি।

দুদক জানায়, আমু ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে ৭২৭/এ নম্বর প্লটে অবস্থিত কেয়ারী প্লাজায় দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার টাকায় অকৃষি জমি এবং রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে এক কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে তার। তার নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকার। তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকার। বাস্তবে এসব সম্পদ ছাড়াও দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে তার। নিজ নামে ও  অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  

এদিকে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম নিজ নামে ও সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহন করেছেন। তিনি দুর্নীতির মাধমে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করে সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

দুদক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এই নেতার নিজ নামে ৪৮/১, আজগর লেনে চারতলা বাড়ি, মিরপুর আবাসিক এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট, নিজ নামে মিরপুর হাউজিং এস্টেটে চার কাঠা জমি, নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। তার দুটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে (ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৫-৭৭০৭ এবং ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১২-১৪৩৫)। তিনি নিজ নামে ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন।

অন্যদিকে রামগতি উপজেলার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে স্বনামে ও তার পক্ষে অন্য ব্যক্তিদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নগদ টাকা; অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে জমি; রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে বিল উত্তোলন ও বিভিন্ন বাজারঘাট নিজস্ব লোকের কাছে ইজারা দিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এছাড়া মদনপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ আব্দুল হান্নান তালুকদার বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও স্বজন প্রীতির মাধ্যমে দলীয়/বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে অনিয়ম করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভার হাট-বাজার ও স্ট্যান্ডসমূহ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে ঘনিষ্ঠজনদের নামে ইজারা প্রদান করেছেন। তিনি ও তার ভাই হাট-বাজার ও স্ট্যান্ডসমূহের ইজারার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি মদনপুর পৌরসভার একাধিক জমি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন এবং একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তার গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন আলিশান বাড়ি। দুই কোটি টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রায় পাঁচ একর জায়গা ক্রয় করেছেন।

লাবু/শহিদ

×