গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নির্বাচন হবে কি না কিভাবে বিশ্বাস করব। তিনি বলেন, কমিশনের পর কমিশন গঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ‘জাস্ট ইজ এ টাইম কিলিং, নাথিং মোর।’
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী প্রচার দল আয়োজিত ‘দুর্যোগ প্রশমনে বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সরকারকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনাদের দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংস্কার দরকার হয় সেটুকু বিবেচনা করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী দিনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব সংস্কার করবে। আমরা বলছি, আপনারা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে, আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব। তবে স্পষ্ট করে আপনারা বলেন, নির্বাচন করবেন কবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখনো নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেননি। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনো নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি, সেখানে আমি কিভাবে বিশ্বাস করব আপনারা নির্বাচন করবেন? তিনি বলেন, নির্বাচন যত শীঘ্রই হবে জনগণের অংশগ্রহণের জোয়ারে রায় হবে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় তা হলে দেশে অতীতের সকল নির্বাচনের রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস পর নির্বাচন। তিনি তাঁর কথা বলেছেন, বলুক। পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা নয়। তা হলে সরকারের কথাটা কি? নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেন? যদি ৩০ মাস বা ৩৬ মাস হয়, তাই বলেন না, সময় তো বলতে হবে। কোনো বিয়ে ঠিক হলে তার তিন মাস আগে তারিখ ঠিক হয়। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন তা হলে প্রস্তুতি নিতে পারি।
আমাদের তো কাজ আছে, আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব আমরা এই করব, সেই করব। আমরা তো একটা রাজনৈতিক দল করি, আমাদেরও আকাক্সক্ষা আছে জনগণকে ‘কনভিন্স’ করা। সুতরাং আপনাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে নির্বাচন কবে করবেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই বদলায়নি। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে আওয়ামী লীগের সকল নেতার মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তা হলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল, এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তা হলে আমাদের ওপরে এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি। তা হলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এ কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু অন্য কিছুই বদলায়নি।
বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, মানুষের অধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন, যারা সন্তান হারা হয়েছেন, যারা পিতৃহারা হয়েছেন, যারা মা হারা হয়েছেন তারা সব হারিয়েছেন। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। বাকি সব আগের মতোই আছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হক প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকা-ের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।
পূজাম-পে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ॥ রাজধানীর তাঁতীবাজারে পূজাম-পে পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার দুপুরে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা গত ১১ অক্টোবর রাতে তাঁতীবাজার পূজাম-পে ঘটা সন্ত্রাসী হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। একই সঙ্গে এই হামলায় জড়িতদের অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান।
মানববন্ধনে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও হামলা করে এতদিন ধরে যারা ইস্যু তৈরি করে অপরাজনীতি করে আসছে, তাঁতীবাজারের পূজাম-পে তারাই হামলা করেছে। আর এসব হামলার মাধ্যমে দেশ অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অবিলম্বে এই হামলায় জড়িতের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত তাঁতীবাজার এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও পূজাম-পে হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।