বক্তব্য দিচ্ছেন হিন্দু নেতা
সংখ্যালঘু জোটের আন্দোলনে যে ৮ দফার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো অবশ্য নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন এসব দাবি বিচ্ছিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তবে এখন গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো একসঙ্গে করে আট দফা দাবি নামে এর বাস্তবায়ন চান হিন্দু নেতারা। যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারে তদন্ত কমিশন গঠন,সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন কিংবা আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানানো হচ্ছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কথায় এটা স্পষ্ট যে, হিন্দুদের উপর ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক’ কিংবা ‘ভারতপন্থী যে তকমা’ সেটার অবসান ঘটাতে চান তারা।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণের পাশাপাশি দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলন এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যখন নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়।
ফলে আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে যেমন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনি আওয়ামী লীগের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে হিন্দুদের উল্লেখ করে এই আন্দোলনের পেছনে ‘ভারত বা আওয়ামী লীগের উস্কানি আছে’ এমন প্রচারণাও আছে বিভিন্ন মহলে। যদিও এসব প্রচারণাকে নাকচ করে দিচ্ছেন সংখ্যালঘু নেতারা।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায় বলছেন, তাদের যে দাবি সেটা মানতে আওয়ামী লীগ সরকার তো বটেই অতীতের কোনও সরকারই কোনো সদিচ্ছা দেখায়নি।
তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে আজকে ২০২৪ সাল। হিন্দুদের উপর যতগুলো অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, একটা ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার কোনোটাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৬ বছর ক্ষমতায়, আমরা ভেবেছিলাম, তারা আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দেবে। কিন্তু বাস্তবে আসলে কিছুই হয়নি।
সুমন কুমার রায় বলেন, বলা হয় যে, আওয়ামী লীগ হিন্দু বান্ধব, হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু তার প্রতিফলন তো আমরা দেখিনি। আবার হিন্দুদের সবাই যে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে বিষয়টাও তেমন না। তাহলে সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের মতো বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি কিংবা জামায়াতের নেতারা অতীতে কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন? তারা তো অবশ্যই হিন্দুদের ভোট পেয়েছেন। সুতরাং হিন্দুরা শুধু আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় এটা আমি মনে করি অমূলক ধারণা। যেকোন নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘুরা সব দলের কাছেই ‘বলির পাঠা’য় পরিণত হন।
তিনি বলেন, ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যদি হেরে যায়, তাহলে তারা এসে হিন্দুদের মারধর করে, অগ্নিসংযোগ করে, ভাঙচুর করে। বলে যে, হিন্দুরা ভোট দেয়নি এজন্য হেরে গেছি। আবার বিএনপি প্রার্থীও হেরে গেলে তারাও বলে যে, এই হিন্দুরাই আমাদের ভোট দেয়নি, সেজন্য হেরি গেছি। অতএব রাজনৈতিকভাবে আমরা যেন একটা বলির পাঠা।
আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কথায় এটা স্পষ্ট যে, হিন্দুদের উপর ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক’ কিংবা ‘ভারতপন্থী যে তকমা’ সেটার অবসান ঘটাতে চান তারা। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে?
এমন প্রশ্নে আন্দোলনের নেতারা বলছেন, তারা এখন চেষ্টা করছেন রাজনীতির বাইরে থাকার।
তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, অতীতে হিন্দু সম্প্রদায়েরও অনেকে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ না দেখে বরং হিন্দু পরিচয়কে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন। এতে ঐসব নেতারা লাভবান হলেও হিন্দুদের কোনও দাবি পূরণ হয়নি। বরং হিন্দুরা বিভিন্ন সময় ‘নির্যাতনের শিকার’ হয়েছেন।
গত ৪ অগাস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংখ্যালঘু জোটের সর্বশেষ যে সমাবেশ হয়েছে, সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের ইসকন নেতা এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, হিন্দুদেরকে আর কেউ নির্দিষ্ট কোনও দলের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যবহার করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা এখন থেকে সমস্ত বাংলাদেশে ভোটের আগে যারা আমাদের অধিকার নিয়ে, আমাদের দাবি নিয়ে কাজ করবেন, আমরা সমন্বিতভাবে তাদেরকেই ভোট দেব। কোনও দলের লেজুড়বৃত্তি আমরা হিন্দুরা কেউ করবো না। যারা হিন্দু নাম নিয়ে এটা করতে চাইবে, আমরা তাদেরকে সামাজিকভাবে বর্জন করবো।
ফুয়াদ