ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

আগে ছিলেন শ্রমিক লীগ, এখন শ্রমিক দল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ১০ অক্টোবর ২০২৪

আগে ছিলেন শ্রমিক লীগ, এখন শ্রমিক দল

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক লীগ সংগঠন করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, এখন তারাই আবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক দলের ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে চরম হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে নগরীর ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে।

জানা গেছে, নগরীর কেডিসি এবং চরের বাড়ি এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা বরিশালে অবস্থিত যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড ও পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা জানিয়েছেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয় ও জনকল্যাণমুখী সংগঠন বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুটি কয়েক ব্যক্তি এখানে বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক লীগ নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। অতিসম্প্রতি ওই একই ব্যক্তিরা বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক দলের ব্যানার ঝুলিয়েছেন। যা নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।

মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি মো. ফয়েজ খান বলেন, ওই দুইটিস্থানে এখন পর্যন্ত শ্রমিক দলের কোন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে দেওয়া হবে। আর কর্মীরা দল পরিবর্তন করতেই পারে। আগে একদলে ছিল, পরে অন্যদলে যাবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। বড় বড় নেতাদের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটে।

বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাছুম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কামাল হোসেন বলেন, এখান থেকে বরিশালের ছয় জেলাসহ শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, তখন সেই সরকারের হয়ে এ সংগঠনটির জনসেবামূলক কাজ করতে হয়। 

তারা আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম এমপি’র প্রভাবে বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক লীগ সংগঠন করার জন্য দৌঁড়ঝাপ করে ব্যর্থ হয়েছিল, এখন তারাই আবার বিএনপির ব্যানারে বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিকদল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এসব কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত রয়েছে, তারা মূলত শান্তিপূর্ণ বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অভিযুক্তরা গত ৫ আগস্টের পর দল পরিবর্তন করে ডিগবাজি দিয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন-নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিপন সিকদার, ইমরান হাওলাদার ও টিটু এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হোসেন আলী ফকির, নুর আরাফাত আকন, আনোয়ার হোসেন খান, ওসমান ফকির, সাঈদ হোসেন ও বরিশাল সদর উপজেলার লামচরী গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক।

অভিযুক্ত ইমরান হাওলাদার বলেন, ব্যানারটি আমি আর টিটু দুইজনে লাগিয়ে ছিলাম। তবে বিষয়টি সম্পর্কে রিপন সিকদার ভালো বলতে পারবেন। মোবাইল ফোনে রিপন সিকদার বলেন, আমি ১০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলে আছি তা সবাই জানে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসনামলে চাঁপের মুখে সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ছবি যুক্ত গেঞ্জি পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি মো. ফয়েজ খানের নির্দেশেই ব্যানার লাগানো হয়েছে বলেও তিনি (রিপন) উল্লেখ করেন।

১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহাদাৎ ইসলাম তোতা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুর রহমান মামুন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। যারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ছবি ব্যবহার করে শ্রমিক দল দাবি করে ব্যানার ঝুলিয়েছে, তারা তো এলাকায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী হিসেবে পরিচিত। এমনকি তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে এখনও আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে নানা কর্মসূচির ছবি রয়েছে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের বরিশাল ডিপো ইনচার্জ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, গত ৮ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে দেখতে পাই অফিসের সামনে ব্যানার ঝুলানো। পরে সিসি ক্যামেরায় দেখতে পেয়েছি কারা ব্যানার লাগিয়েছে। 

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। যুমনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের বরিশাল ডিপো ইনচার্জ প্রিয়তোষ নন্দির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

 

এসআর

×