ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ফখরুল

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৯ অক্টোবর ২০২৪

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হবে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বুধবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজা ম-প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
ফখরুল বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা বা রাজনীতি থাকবে না।
পূজাম-পে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে  ফখরুল বলেন, আমরা অতীতেও এই পূজাম-পে এসেছি। এখানকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে আমাদের তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং আমাদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আপনাদের এখানে অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এরই মধ্যে আপনাদের নেতাদের সঙ্গে  দেশের পরিবর্তনের পরেও আমরা যোগাযোগ করেছি, আলোচনা করেছি, কথা বলেছি।

আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেই ৮ দফা নিয়ে আমাদের অবশ্যই সহানুভূতি রয়েছে। অতীতে যেমন আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় আমরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, আগামীতেও আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব। ফখরুল বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের যত জমিজমা অতীতে দখল করে নেওয়া হয়েছে, এর মূলে যে সরকার ছিল তা আপনারা জানেন, আমি তাদের নাম বলতে চাই না। আমি আপনাদের এ কথাটা বলতে পারি, আমাদের সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হবে আমরা প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করব।
ফখরুল বলেন, বিশাল পরিবর্তনের পর সারাদেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে এবং পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশী কিছু মিডিয়া, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে যা একেবারেই সত্য নয়। ঘটনা ঘটেনি আমি তা বলব না, তবে সেগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, সেগুলো ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা অশুর শক্তি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পরিবর্তন হয়েছে এবং তাদের নেত্রী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। যেটাকে সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং যারা বিপ্লবের সঙ্গে, বিদ্রোহের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন সবাই মিলে সমর্থন দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ পূজা উদযাপনের বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আপনাদের সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি, মতবিনিময় করেছি এবং সর্বাত্মকভাবে আমাদের নেতা বিএনপির  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিটি ম-পে সশরীরে আমাদের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তারা এখন তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আমাদের সকলকে পরিবর্তনের সুযোগ নিতে হবে। এই দেশটি কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে আনন্দ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে আসুক। আমি কামনা করি, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক।

আপনারা যে দেবীর আরাধনা করছেন, তার আবির্ভাব অশুরকে দমন এবং মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। আজকের দিনে আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে ভেদাভেদ, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। 
এ সময় মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বিএনপি মহাসচিব ও দলের নেতাদের দুর্গাপূজার প্রথম দিনে ঢাকেশ্বরী পূজাম-পে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, আমরা ন্যায়বিচার ও দোষীদের শাস্তি চাই। ৫ আগস্টের পর আপনার দলের নেতাকর্মীরা আমাদের নিরাপত্তায় ছিলেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

×