সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওই দিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুন, গুম ও গণহত্যার নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। হত্যার অভিযোগে ১৩ আগস্ট (বুধবার) থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৮টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন পেশার লোকজনকে আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা করা হয় ১৩ আগস্ট (বুধবার) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায়। কোটা আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে মুদি দোকানি আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়। একটি হত্যার, আরেকটি অপহরণের অভিযোগে। গত ১৯ জুলাই মিরপুরে ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের নিহতের ঘটনায় ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করেন নিহতের ভাই মো. রাজীব। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া এদিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন।
১৫ আগস্ট
১৫ আগস্ট শিশু হত্যাসহ শেখ হাসিনার আরও বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভুইয়া। একই দিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মো. আবুল কামাল নামে এক ব্যক্তি।
১৬ আগস্ট
১৬ আগস্ট ঢাকা ও বগুড়ায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০ জুলাই ঢাকার মিরপুরে মো. সিফাত হোসেন (২৬) নামে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা কামাল হাওলাদার। মিরপুর মডেল থানা এজাহার হিসেবে মামলাটি গ্রহণ করা হয়। গত ৪ আগস্ট বিকালে বগুড়া শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় মারা যান শিক্ষক সেলিম হোসেন। এ ঘটনায় ১৬ আগস্ট নিহত শিক্ষকের বাবা সেকেন্দার আলী শেখ হাসিনাসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪৫১ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।
১৭ আগস্ট
১৭ আগস্ট রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়। গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) নিহতের ঘটনায় তার চাচা মোহাম্মদ পারভেজ শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে ১৮ জুলাই রাজধানীর লালবাগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় তার বাবা লালবাগ থানায় শেখ হাসিনাসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
১৮ আগস্ট
১৮ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আটটি মামলা করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্র ইকরাম হোসেন কাউসার এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র ওমর ফারুককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন বেগম। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। একই দিনে ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাটে মামলা হয়।
৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আবুল হাসান সুজন নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় তার বড় ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল তাহির ও ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় তার ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। নিহত আব্দুল্লাহ আল তাহিরের (২৮) বাবা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
অন্যদিকে নিহত ফলবিক্রেতা মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এদিকে গত ৪ আগস্ট নাটোর শহরে স্কুলছাত্র ইয়াসিন ইসলামকে (১৭) আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১১ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা ফজের আলী। এদিকে গত ৪ আগস্ট জয়পুরহাটে পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা মজিদুল ইসলাম। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১৯ আগস্ট
১৯ আগস্ট (সোমবার) ঢাকা ও চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঠমিস্ত্রি তারিক হোসেন (২৫)। এ ঘটনায় নিহতের মা ফিদুশি খাতুন ১৯ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। অন্যদিকে গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় নবম শ্রেণির ছাত্র লিটন হাসান হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে আসামি করে একটি মামলা করেন নিহতের বড় ভাই মো. মিলন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
একই দিন মিরপুর-১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ কবির হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী আফসানা আক্তার।
এ ছাড়া গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় তার মা জোসনা আক্তার চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ১০৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
২০ জুলাই
২০ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ১০ হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, সূত্রাপুর ও রামপুরায় একটি করে পাঁচটি হত্যা মামলা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিরপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের ভাই সুলতান মাহমুদ।
যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে মো. ফরিদ শেখ নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতে বাবা মো. সুলতান শেখ। এ ছাড়া মামলায় ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের আদাবরে পোশাককর্মীকে সোহেল রানাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত সোহেলের ভাই ইব্রাহীম। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গুলিতে সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্র হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের মা কুলছুমা আক্তার।
একই দিন রাজধানীর রামপুরা এলাকায় শিশু তামীম শিকদারকে (১৩) গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন নিহতের দাদি মোছা. কোহিনূর।
বগুড়া
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কমর উদ্দিন বাংগী (৪০) নামে এক রিকশাচালক নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৮২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তহমিনা।
জয়পুরহাট
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জয়পুরহাটে গুলিতে অটোরিকশাচালক মেহেদী হাসান (২৬) নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী জেসমিন আকতার সৃষ্টি।
রংপুর
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী জিতু বেগম। এ মামলায় আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জে গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাইফুল ইসলাম (৩০)। এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবহনশ্রমিক জনি নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের বাবা ইয়াসিন।
২১ আগস্ট
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি হত্যাচেষ্টাসহ আরও ১০ হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় পাঁচটি এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা, ঢাকার আশুলিয়া, ও চট্টগ্রামে একটি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনকে আসামি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে সামসুল আরেফিন নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী এ মামলা করেন। পরে সূত্রাপুর থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
মিরপুর থানার মামলায় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ও সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকসহ পাঁচ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা। মিরপুর মডেল থানার মামলাটি করা হয়।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে রাজধানীর রামপুরায় রাসেল মিয়া নামে একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর উত্তরায় মো. ফজলুল করিম (২৮) নামের এক পোশাককর্মী নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন আয়নাল। মামলাটি উত্তরা পূর্ব থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নবকিশলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র রোমান মিয়া (১৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১০৫ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন নিহতের খালা রিনা।
ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ)
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিতে বাসচালক আবুল হোসেনকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেছেন নিহতের মা সাহিদা বেগম।
চট্টগ্রাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে মো. ফজলে রাব্বি নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ২৭০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট (বুধবার) নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি করেন নিহত রাব্বির বাবা মো. সেলিম মিয়া। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আশুলিয়া
সাভারের আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক সেলুনকর্মী জাহিদুল ইসলাম সাগরকে (২৮) গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন নিহতের ভাই আনারুল ইসলাম। পরে মামলাটি আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গাজীপুর
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নূর আলম (২২) নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা মো. আমির আলী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় ১৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেট
৪ আগস্ট সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র- জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলি ও হামলা করার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জুবের আহমদ। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বগুড়া
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি ও হামলার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৪০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিবগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়ক শাহীনুর ইসলাম।
২২ আগস্ট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা, গুম-অপহরণের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ১০ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বিন জাহিদকে গুলি করে হত্যা অভিযোগে বিমানবন্দর থানার শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনকে আসামি করে মো. জাকিউল্লাহ বাহার নামে এক ব্যক্তি।
মোহাম্মদপুরে শাহরিয়ার হোসেন রোকনের (২৩) মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা করেন রবিউল গান হিল্লোল। পরে মামলাটি মোহাম্মদপুর থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গত ২০ জুলাই ধানমন্ডিতে কিশোর সাব্বিরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় নিহতের দাদা জয়নাল শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত ২০ জুলাই সাব্বির চা ও ফুল বিক্রির জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে তিনি খবর পান, সাব্বিরের মরদেহ রয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
উত্তরা পশ্চিম থানায় গুম-অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মো. সোহেল রানা নামের ভুক্তভোগী আইনজীবী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
এ ছাড়া গত ৪ আগস্ট সাভারের বাইপাইলে হকার মো. শাহাবুল ইসলাম ওরফে শাওনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানার আদালতে মামলা করেন নিহতের এক নিকটাত্মীয় মো. মজিবুল হোসেন। পরে মামলাটি আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া এই মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় বিএনপি নেতা মো. বাবুল মিয়া হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আমিন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শফিকুল ইসলাম শফিক নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি আরেকটি মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার।
ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ)
সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী ফয়সাল হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭৭ জনের নাম উল্লেখ কওে আরও ৮০ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত ফয়সালের বাবা সোহরাব মিয়া। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯ জুলাই বিকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের ভূইগড় বাসস্ট্যান্ডে মিছিলের সময় ফয়সাল মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।
গাজীপুর মহানগর
গাজীপুর মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হকার আরিফ বেপারিকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩৫০ জনকে আসামী করে গাজীপুরের গাছা থানায় একটি মামলা করেন নিহতের বাবা মো. রজ্জব আলী।
বগুড়া
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ আলম সুজাকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াহাব।
২৩ আগস্ট
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আরও ১৪টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে কিশোর নাইম হাওলাদার (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় শেখ হাসিনাসহ ১৯৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা হিসেবে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা নাইম হাওলাদারের বাবা কামরুল ইসলাম।
১৯ জুলাই মোহাম্মপুর বছিলা রোডের ময়ূর ভিলার সামনে শ্রমিক শাহরিয়া হোসেন রোকন (২৩) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মো. রবিউল খান হিল্লোল নামের এক ব্যক্তি। একই দিন বছিলা এলাকায় ট্রাক চালক সুজন হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪৫০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম।
গত ৫ আগস্ট রুবেল আদাবরের রিংরোডে গার্মেন্টসকর্মী রুবেলকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রবিউল ইসলাম নয়নকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ঢাকা মহানগর হাকিম তাহমিনা হকের আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন বিএনপি সমর্থক সুমি বেগম। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে মামলাটি রমনা মডেল থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গত ৫ আগস্ট উত্তরায় পোশাকশ্রমিক ফজলুল করিমকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন।
ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল আহাদ (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় শেখ হাসিনাসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন সাভার হাইওয়ের ওপরে শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন, আলামিন ও মেহেদী হাসানকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যা মামলা করেছেন আব্দুল জলিল নামের এক ব্যক্তি। পরে মামলাটি আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিস্ত্রি রানা নিহতের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বাবা খলিল মিয়া। এদিকে ৪ আগস্ট নারাণগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হৃদয় নামে এক আন্দোলনকারী। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে শেখ হাসিনাসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০ জন অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শফিক মিয়া (২৮) ও হকার শিশু হোসাইন (১০) হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। নিহত শফিকের ভাই আবু হানিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় শেখ হাসিনাসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। অন্যদিকে ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে হোসাইন (১০) গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত শিশু বাবা।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ সৈকতকে (১৭) গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১২৬ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা বাবা নজরুল ইসলাম।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকালে সাভার থানাধীন মুক্তির মোড়ে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ সৈকত নিহত হন।
চান্দিনা (কুমিল্লা)
গত ১৯ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলন চলাকালে ইমন (২৬) নামের এক যুবক নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪০০ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি মামলা করেছেন সানি নামে এক ব্যক্তি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭ মামলা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাতটি অভিযোগ করা হয়েছে। প্রথম মামলা করা হয়েছে ১৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন। গত ২১ আগস্ট তিনটি অভিযোগ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত জুলাইয়ে চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় চট্টগ্রামে নিহত ফয়সাল আহমেদের বাবা জাকির হোসেন এ অভিযোগ করেন।
হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আরেকটি মামলা করেছেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৮ ধারা অনুসারে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে। আইনের ৩(২) ও ৪(১)/৪ (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া ১৮ ও ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে সংঘটিত ‘গণহত্যায়’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ একটিতে ৭০ জন এবং অপরটিতে ৭৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে হত্যা ও গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহতের বাবা মো. আব্দুল মতিন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে থাকার ৬১ দিন পূর্ণ হয়েছে৷প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সম্প্রতি ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ন্যায়বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন৷ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ভারতের ভিসার ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকলে ৪৫ দিন থাকা যায়৷ সেই ৪৫ দিন শেষ হয়ে গিয়েছে৷
প্রশ্ন উঠেছে, এখন কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে ভারত?
ও পি জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাোধা দত্ত ডিডাব্লিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন‘‘দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে৷ ফলে তাতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে অনুরোধ এলে তা ভারত খতিয়ে দেখবে৷ তার একটা প্রক্রিয়া আছে, তা চলতে থাকবে৷''
তবে এই অনুরোধ করা হলেই যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই৷
ভারত তো কতদিন ধরে আর্থিক মামলায় অভিযুক্ত বিজয় মালিয়াকে চাইছে৷ কিন্তু এখনো তো বিজয় মালিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়নি৷ ২০১৬ সালে মালিয়া ভারত ছেড়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন৷ তারপর তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে৷ তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে৷ তারপর আইনি জটে এখনো মালিয়াকে ফেরত পায়নি ভারত৷
শ্রীরাধা বলছেন, ‘‘শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে৷ ভারত এটাও মনে করে না, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নিরাপদে থাকতে পারবেন৷ তাই শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে ফেরত দেয়া হবে বলে আমার অন্তত মনে হয় না৷ আর তাকে ফেরত পাঠানোর কোনো নৈতিক বাধ্যবাধকতাও ভারতের নেই৷''
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক সাবেক কূটনীতিক মনে করেন, শেখ হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না৷ তার মতে, দুইটি বিষয় এক করে দেখা উচিত নয়৷ দুইটি বিষয় আলাদা৷ বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী দেশ৷ ফলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার পিছনে দুই দেশের স্বার্থ হয়েছে৷
দলাই লামার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাকেও ভারত আশ্রয় দিয়েছে৷ তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আছেন৷ তারপরেও তো তার থাকা-না থাকার বিষয়টি আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা হয়নি৷বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে৷ তার কাছে আর কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই৷
সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘টেকনিক্যালি বলা যেতে পারে, শেখ হাসিনা স্টেটলেস৷ তিনি ভারত থেকে বাইরের কোনো দেশে যেতে পারবেন না৷ কিন্তু ভারতে থাকার ক্ষেত্রে তার কোনো অসুবিধা নেই৷''
ফলে তিনি কতদিন এখানে থাকবেন, তাকে বাংলাদেশের হাতে দেয়া হবে বা হবে না, এটা শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন৷ এখন যা পরিস্থিতি তাতে প্রত্যর্পণের আবেদন করা হলেও শেখ হাসিনাকে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তারা অন্তত মনে করছেন না৷
ফুয়াদ