সংলাপ শেষে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিরা। আগামী নির্বাচন যাতে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দেওয়া যায়, সে জন্য মৌলিক কিছু প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
সংলাপ শেষে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ সরকার একটা নির্দলীয় সরকার। পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, তারা দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছে।
শনিবার সংলাপ শেষে বিকেল চারটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান জামায়াত আমির। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এ জন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবে, আমরা সেই বিষয়ে কথা বলেছি।
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে জামায়াতের আমির বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে উন্মুক্ত করব। আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরব, কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করে। জামায়াতের আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের নেত্বত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির আবু তাহের মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, এমএম শামসুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জনগণ এবং সরকার একসঙ্গে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে পারে, সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে- সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে।
আমরা আশা করছি, বর্তমান যে সরকার আছে, তারা কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম, সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এটা নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করব। এটা দেরি হবে না। আমরা সামনে আগাতে চাই।
জামায়াত আমির বলেন, দুর্গাপূজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী, এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে, একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের ভাই-বোনরা উদ্যাপন করতে পারবে।
সংস্কারকে এক নম্বরে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কারের টাইমলাইন কী হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুটি বিষয় দেশবাসীর কাছে চেয়েছি এবং সরকারের কাছে জানিয়েছি। একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটা নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। এই দুটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মিডিয়া জাতির আয়না। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছর আপনারা বিবেক অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি।
অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করা হয়েছে সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য। অতীতে যা আছে তা আমরা পেছনে ফেলে দিলাম। তবে যারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, যারা মানুষ খুন করেছেন, গুম করেছেন, দেশের সম্পদ পাচার করেছেন, আয়নাঘর করেছেন তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক তা আমরা দাবি করি। আমাদের ওপর যারা জুলুম করেছে, তাদের ওপরও জুলুম হোক তা আমরা চাই না। আমরা চাই ন্যায়বিচারের জন্য যাতে সবাই নিজের অধিকার বুঝে পায়।