ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

প্রথম দিন বিএনপি

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ কাল থেকে

শরীফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৩ অক্টোবর ২০২৪

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ কাল থেকে

আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় দফা সংলাপ

আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় দফা সংলাপ। বেলা আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপিকে দিয়ে এ সংলাপ শুরু হবে। এর আগে দুই দফা সংলাপে সার্বিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলেও এবার আলোচনায় প্রাধান্য পাবে রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ। 
অন্তর্বর্তী সরকার চায় সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল চায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন। আর নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের সকল কাজ সম্পন্ন করবে। এদিকে আগের দু’বারের মতো এবারও সংলাপে ডাকা হচ্ছে না আওয়ামী লীগকে। 
জানা যায়, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিসহ বেশ ক’টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং এর কোনো সম্ভাবনাও নেই। সংলাপে মূলত কি কি সংস্কার এবং কিভাবে তা করা যায় এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশ ক’টি দল লিখিতভাবে সংস্কার প্রস্তাব জমা দেবে বলে জানা যায়। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। 
শনিবার বেলা আড়াইটায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় দফা সংলাপ শুরু হবে। এ সময় সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ সিনিয়র নেতা এ সংলাপে অংশ নেবেন। অন্যান্য দল থেকেও অনুরূপ সংখ্যক নেতা সংলাপে অংশ নেবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। 
জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সংস্কারের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। কোনো রাষ্ট্রপ্রধান সংস্কার কাজে সার্বিক সহায়তার প্রস্তাবও দেন। এ পরিস্থিতিতে ড. ইঊনূস দেশে ফেরার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে সংলাপের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেয়। সরকারে এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। 
তৃতীয় দফা সংলাপের অনেক আগেই সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সংস্কার কমিশনগুলো হচ্ছে- ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সরফরাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয় সূত্র জানায়, সংলাপের জন্য তাদের দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সংলাপে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদেরও সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের  জানিয়েছেন। শনিবার বিকেল চারটায় সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বুধবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, প্রধান উপদেষ্টা শনিবার থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেখানে অন্য উপদেষ্টারাও উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর আগে দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সংলাপ হয়েছে। তারই চলমান প্রক্রিয়ায় শনিবার থেকে আবারও সংলাপ শুরু হবে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে। এ আলোচনার মুখ্য বিষয় হবে ছয় সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে দলগুলোকে অবহিত করা হবে। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। 
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। পরে ৬টি কমিশন গঠন  করা হলেও এখনও প্রজ্ঞাপন হয়নি। তবে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। 
সংস্কারের জন্য কমিশনগুলোর প্রধানরা কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার ওপর কমিশন গঠন নির্র্ভর করছে না।  কশিমনের জন্য অফিস খোঁজা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এবারের সংলাপে দেশে প্রধান প্রধান দলগুলোকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত ৬টি সংস্কার  কমিশনের কাছে দলীয় সুপারিশ জমা দিতে বিএনপিও ৬ টি কমিটি গঠন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশনকে সুপারিশ জানাবে বিএনপি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন করেছেন। কমিটিগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আশা করি, সংস্কার কমিশনে আমরা কিছু সুপারিশ করব। কমিশন ডাকলেও যাব না ডাকলেও যাব।
এর আগে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন কিছু সংস্কার করা যেতে পারে। এর পর নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের  রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই মনে করি, এই সরকার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এ সরকার জনগণের জন্য কি করতে চান প্রধান উপদেষ্টা অতিদ্রুত সেটা উপস্থাপন করবেন। আমরা আশা করি, একটা রোডম্যাপের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। দেশের মানুষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা নির্বাচনের ওপর অনেক জোর দিতে চাই। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক’জন ব্যক্তি রাষ্ট্র সংস্কার করে  দেবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সংস্কার করতে হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা সবাই যোগ্য ব্যক্তি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগে সত্যিকার অর্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা হয়নি জানিয়ে ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এই সরকারকে জানতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারের মতবিনিময় করতে হবে। দেশে কিভাবে একটি ভাল নির্বাচন অতিদ্রুত করা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আজকে আমাদের সামনে নতুন এক ভবিষ্যৎ এসেছে। সকল জঞ্জালকে উপড়ে ফেলে দেশকে সুন্দর করে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।

×