মেজর হাফিজ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১৮ বছর বয়সীদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র বিনির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। অপর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত সফল হবে না।
মেজর হাফিজ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে প্রত্যেক নাগরিক এক থেকে দুই বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশেও সে ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবার রোগ হলো দুর্নীতি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে পাশের দেশ ভারত থেকে আমরা সেটা শিখতে পারি।
তাদের দেশে আইন করা আছে যে, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সরাসরি জেলখানায় নিয়ে যাওয়া যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আমাদেরও দিতে হবে। দুদককে শক্তিশালী করতে হবে। সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতি যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের নিয়োগ দেবেন এমন ব্যবস্থা করতে হবে। যে ব্যবস্থা ভারতে রয়েছে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, পাহাড়ের লোকজন সহজ-সরল। তাদের ভুলপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র হয়। জিয়াউর রহমানের শক্ত পদক্ষেপের কারণে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমি প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বলব, তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে উস্কানি দেবেন না। যুদ্ধ করতে হলে বাংলাদেশের সব মানুষ কিন্তু এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
জুলাই-আগস্টে আন্দোলন প্রসঙ্গে মেজর হাফিজ বলেন, শুধু ছাত্রদের আন্দোলনে বিপ্লব হয়নি। বিএনপি ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করছে।
তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন জোরদার হলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমি সবাইকে বলব, ড. ইউনূস একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেছেন, কাজ করেছেন। ছাত্র-জনতা সবার সঙ্গে কথা বলে সকল সিদ্ধান্ত নিন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা জয়নুল আবদীন, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।
পূজাকে কেন্দ্র করে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত সফল হবে না- গয়েশ্বর : দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে। রবিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে
‘জিয়া মঞ্চ’র ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়, এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। যারা আজকে সরকারে আছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সবাই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। আমরা বিশ্বাস করি, তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে গণতন্ত্রের চলার পথকে সুগম করবেন। যতদ্রুত সম্ভব গণতন্ত্রের সূচনার জন্য একটা নির্বাচন দেবেন। সেই নির্বাচনে সব মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের নতুন পথচলা শুরু হবে।
গয়েশ্বর বলেন, দেশে এখন কিছু ঘটনাও আছে। আবার কিছু গুজবও আছে। ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তিরা বসে নেই। পূজাকে কেন্দ্র করে তারা একটা নাশকতা করার চেষ্টা করবে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দেব। সেখানে বিএনপির কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতির কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা আমরা অত্যন্ত কঠিন হাতে মোকাবিলা করব।
গয়েশ্বর বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গতিশীল রাখতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আর তা না করা হলে সেটা হবে দুঃখজনক। আশা করি, সবার আন্দোলন ও সংগ্রাম আমলে নিয়ে এই সরকার আমাদের মামলার হাজিরা থেকে রেহাই দেবে। যদি এসব মামলায় এখন আমাদের হাজিরা দিতে হয়, তা হবে দুঃখজনক।
এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।