ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

৬ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় খালেদা জিয়া 

প্রকাশিত: ২০:১৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৬ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় খালেদা জিয়া 

খালেদা জিয়া। ফাইল ফটো

এভারকেয়ার হাসপাতালে ৬ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরেন তিনি।  বাসায় ফেরার সময় বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাঁকে স্বাগত জানান। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, মেডিকেল বোর্ড  শারীরিক অবস্থার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে তাঁকে  বাসায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শিঘ্রই তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। 

১২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়। শিগগিরই তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানিয়েছেন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন এবং চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন। তাঁকে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়। 

সাড়ে ৬ বছর বন্দিজীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের একদিন পর ৬ আগষ্ট রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি এখন মানসিকভাবে স্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। তবে অসুস্থ্যথার কারণে তিনি কিছুটা পেরেশানিতে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। 

৭৯ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থারাইটিস ও ডায়াবেটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র ও চোখের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। এ কারণে ক’দিন পর পর তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। তবে তাঁর লিভারের সমস্যা বর্তমানে খুবই খারাপ। 

তাই বিদেশে গিয়ে তিনি প্রথম লিবারের এই জটিল চিকিৎসা করাবেন। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য আরও জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসা করানো হবে। অসুস্থ্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য কাতার থেকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা যায়। 

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্যাবিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলের কেবিনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। 

ওইদিনই তিনি গুলশানের বাসায় ফিরোজায় অবস্থান নেন তিনি। এর পর থেকে ৬ মাস পর পর তাঁর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এ বছর  ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করার একদিন পর দেশের পট পরিবর্তন হলে ৬ আগষ্ট স্থায়ী মুক্তি পান খালেদা জিয়া। 

২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ ক’বার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। করোনাক্রান্ত হয়ে ওইবছর ১৫ এপ্রিল এক ঘন্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় ওইদিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন। 

১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভার কেয়ার হাসপাতালে তাঁর বায়োপসি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭দিন চিকিৎসা নেয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেন ওইবছর ৭ নবেম্বর। 
এরপর ১৩ নবেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। 

২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার  হাসপাতালে গিয়ে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান খালেদা জিয়া। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। ১০ জুন রাত সোয়া ৩টায় বুকের ব্যথা নিয়ে চতুর্থ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ১১ জুন এনজিওগ্রামের পর তাঁর হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়লে  ওইদিনই একটি বøকে রিং পরানো হয়। পরদিন দ্রæত এনজিওগ্রাম করে তাঁর হৃদপিন্ডে ৩টি ব্লক পাওয়া যায়। 

এর মধ্যে একটি বøকে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর ক’দিন পর তাঁকে কেবিনে নেয়া হয়। কেবিনে রেখেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চালায় মেডিকেল বোর্ড। এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ২৪ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে পরীক্ষা শেষে রাতেই আবার বাসায় ফেরেন তিনি। এর পাঁচ দিন পর ২৭ আগষ্ট আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ৩১ আগষ্ট তিনি বাসায় ফিরেন। 

২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর তিনি গুলশানের বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে ওইদিন রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে ৬ দিন চিকিৎসার পর ৪ মে আবার তিনি গুলশানের বাসায় চলে যান। 

এরপর আবারও ১৩ জুন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫ দিন চিকিৎসা শেষে ১৭ জুন  বাসায় ফিরেন। ৫৩ দিন পর ৯ আগষ্ট আবারও চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিনই হাসপাতালে ভর্তি হন।  ৫ মাস ২ দিন পর এ বছর ১১ জানুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন। 

এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেদিনই তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরেন। এর পর ১৩ মার্চ এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। একদিন পর ১৪ মার্চ তিনি বাসায় ফিরেন। ৩০ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায়  আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ২ এপ্রিল বাসায় ফিরেন তিনি। এর পর ১ মে সন্ধ্যায় এভারকেয়ংার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২ মে রাতে তিনি বাসায় ফিরেন। 

২১ জুন গভীর রাতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ২ জুলাই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। ২৩ জুন তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। ৮ জুলাই খালেদা জিয়া আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৪৫ দিন পর ২১ আগষ্ট গুলশানের বাসায় ফিরেন। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। এখন তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। 
 

শরিফুল/ এসআর

×