ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

আশা মির্জা ফখরুলের

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেবে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত সংস্কার রুপরেখার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত সংস্কারের কাজ শেষ করে নির্বাচন দেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন,  বুধবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন। সেখানে সংস্কারে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের নামও বলেছেন। তিনি মোটামুটিভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশন মোটা দাগে তুলে ধরেছেন। তবে নির্বাচনের মহাসড়কে উঠতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সংস্কার কাজগুলো দ্রুত শেষ হবে এমনটাই  প্রত্যাশা করছি। সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি।

সংস্কার প্রয়োজন, কারণ গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়। মূল যে বিষয়টা রয়েছে গণতন্ত্রের জন্য জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত পার্লামেন্ট দিয়ে দেশ চলবে সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করি। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছেন। এই কাজ করার জন্য তাদের সময়-সুযোগ সবই দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। 
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা, যা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে।

জনগণ কী চায়, জনগণ কীভাবে জিনিসটা দেখতে চায় সেই বিষয়টা থাকতে হবে। আমরা আশা করব, বর্তমান সরকার সেটা উপলব্ধি করবেন।  যাদের দায়িত্ব দেওয়া আছে তারা দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করার চেষ্টা করবেন এবং জনগণ যাতে উপকৃত হয় সেই প্রত্যাশাই আমাদের থাকবে।
১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালনে বিএনপির ঘোষিত দুদিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি  পর্যালোচনা করতে দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের স্থায়ী কমিটির অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এই সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রধান অতিথি ছিলেন। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য এই দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমাদের পালন করতে হবে। আমরা দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল সাড়ে তিনটায় সমাবেশ হবে।  

এই সমাবেশে ১৪-১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের স্মরণ করা হবে। এই সমাবেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের ব্যবস্থা থাকবে। আর ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশটি হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াার সমাবেশ। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাইরের সব বিভাগীয় শহরেও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশাসনে অস্থিরতা সম্পর্কে ফখরুল বলেন, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। এ রকম বিপ্লবের পর এ ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা তো সম্পূর্ণ নতুন সরকার। প্রশাসনে এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সব জায়গায় বেশিরভাগ লোকই তাদের মতালম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে এটা ঠিক হতে একটু সময় লাগবেই। 
আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান এটাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্যে একটা চক্র কাজ করছে। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বাংলাদেশ সম্পর্কে। দেশের মানুষ এর অবশ্যই প্রতিবাদ করছে, এ ধরনের অপপ্রচারে তারা কান দেবে না। 
মির্জা ফখরুল বলেন, শিল্পক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ধরনের প্রবণতাকে নস্যাৎ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, যেন কোনো ব্যক্তি কোনোভাবেই দেশের অর্জিত যে সাফল্য সেটাকে বিনষ্ট করতে না পারে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছে সহযোগিতা করতে হবে।
যৌথসভা ও সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের দেষ্টা আবদুস সালাম, দলের সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, দলের নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, সাইয়েদুল আলম বাবলু, শওকত হোসেন সরকার, নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি আফরোজা খান রীতা, ঢাকা জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।

×