সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন বিএনপির
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ওই সরকারের দোসরদের বিচারের দাবিতে বুধবার সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেছেন বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাড়া-মহল্লা থেকে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান করেন তারা। অবস্থান কর্মসূচি শেষে মিছিল করে ফিরে যান নেতাকর্মীরা। আজ বৃস্পতিবারও সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, সদরঘাট ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সদ্য পদত্যাগকারী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সদরঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলকালে বিএনপির নির্বাহী কমিটি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, কোনো দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। অরাজকতা বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। তারা ষড়যন্ত্র করছে দেশে কোনোভাবে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর।
ইশরাক বলেন, দেশে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তবে, তাদের আমরা শক্ত হাতে রুখে দেব। কোনো দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের ভেতর আওয়ামী সন্ত্রাসী ও কুচক্রী মহল সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই তা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার নিশ্চিত করেই ছাত্র-জনতা ঘরে ফিরবে।
আন্দোলনে শিশু-কিশোররা সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে- রিজভী ॥ এবারের আন্দোলন অভূতপূর্ব ছিল মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ আন্দোলনে আলো পিয়াসী শিশু-কিশোররা তাদের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। বুধবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, এবারের আন্দোলনে শিশু-কিশোররা পায়ে গুলি খেয়েও দুহাত প্রসারিত করে সেই গুলিকে আমন্ত্রণ করেছে। এমন অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত আমরা রংপুরে আবু সাঈদের ক্ষেত্রে দেখেছি। ঢাকার রাজপথে ও অলিগলিতে পুলিশ গুলি করে কতজনকে হত্যা করেছে তার কোনো হিসেব নেই।
রিজভী বলেন, যে কোনো আন্দোলন-বিক্ষোভে পুলিশের শটগানের মতো নিষ্ঠুর অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, যারা সরকারের মধ্যে থেকে মাসুম বাচ্চাদের হত্যা করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে মদত দিয়েছে, তাদের দ্রুত বিচারে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। জনগণের আকাক্সক্ষার পরিপূরক হিসেবে সরকারকে কাজ করতে হবে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে স্তব্ধ করতে, মানুষের কণ্ঠরোধ করতে, প্রতিবাদী উচ্চারণ স্তব্ধ করে দিতে পুলিশকে অস্ত্রসজ্জিত করে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর সরকার পুলিশ বাহিনীকে তৈরি করেছিল গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতা রক্তের স্রোতধারা বইয়ে দিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।