ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

জাহাঙ্গীর বিহীন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে টক অব দ্যা টাউনে গাজীপুর

নূরুল ইসলাম, টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৫ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ২১:৪৪, ৫ জুলাই ২০২৪

জাহাঙ্গীর বিহীন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে টক অব দ্যা টাউনে গাজীপুর

জাহাঙ্গীর আলম

দীর্ঘ দেড় বছর পর বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা ঘোষণার পর থেকে কমিটির ভালো মন্দ নিয়ে পুরো গাজীপুর মহানগর জুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পক্ষ বিপক্ষের এই আলোচনা সমালোচনায় সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় থাকাদের নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিহীন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগর এখন টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সাধারণ সম্পাদক হয়েও কেন তাকে কমিটিতে রাখা হলো না? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলীয় একাংশের মাঝে। 

নানা কারণে দল থেকে বহিষ্কার ও দলে পুনরায় ফিরিয়ে আনা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পূর্নাঙ্গ কমিটিতে না রাখায় আওয়ামী লীগের একটি অংশ এখন চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের অনেকে আশংকা প্রকাশ করছেন, এতে দ্বিধা বিভক্ত রাজনীতির সৃষ্টি হবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগে। 

রাজনৈতিক সচেতনরা আড্ডা আলোচনা কুশল বিনিময়ের এখন একটাই প্রসঙ্গ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কেমন  হলো কমিটি? কেউ বলছেন, মোটামুটি, কেউ বলছেন একদম বাজে একটা কমিটি হয়েছে, আবার কেউ বলছেন কে কোন পদ পেয়েছেন সেটা বড় কথা নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে সেটাই বড় কথা! 

২০২২ সালের ১৯ নবেম্বর গাজীপুরে রাজবাড়ি ময়দানে দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘটা করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খানকে সভাপতি ও দলের ভারপ্রাপ্ত হয়ে থাকা আতাউল্ল্যাহ মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা দেন। পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পার হয়ে যায় দেড় বছর। 

কমিটিতে পদ পাওয়া নানাজনরা বলছেন, যখন পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত করে ঘোষণা দেয়া হলো তখন প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে কমিটিকে। পূর্নাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সদস্যরা বলছেন, আমাদের বিরুদ্ধে এটা একটা ষড়যন্ত্র। আবার কমিটিতে থাকা অনেকে বলছেন, প্রশ্নবিদ্ধেরই কমিটি হয়েছে। সর্বত্র চলছে এমন সব বিতর্কিত কথাবার্তা।

এমন নানা বাক্যেবাণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নয়া এই পূর্নাঙ্গ কমিটি। অপর দিকে জাহাঙ্গীর আলমের কোন পদে থাকা, না থাকা নিয়ে পুরো গাজীপুরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, সাথে দীর্ঘ মেয়াদি নানা আশাবাদের কথাও শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কয়েকজন বিতর্কিতদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কয়েকজন তাদের মনোপুত পদ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। মনোপুত পদ না পেয়ে হতাশায় ভোগারা মিডিয়াসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করে বলছেন, ৪৭ এর ভারত পাকিস্তান ভাগাভাগির মতো হয়েছে এই কমিটি।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিটির উপদেষ্টা ও সারাদেশব্যাপী আলোচনায় আলোচিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কমিটিতে না রাখা বা না থাকাকে কেউ কেউ বলছেন জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগের লোকাল রাজনীতি থেকে সরাতে কৌশলে কৌশলী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ জাহাঙ্গীর আলমের কমিটিতে না থাকাটাকে দেখছেন আশীর্বাদ হিসাবে।কারণ ২০২২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ। এই কমিটির মেয়াদ আর মাত্র দেড় বছর বাকি আছে। দেড় বছর পর ২০২৫ সালে এমনিতেই এই নয়া কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলছেন ২০২৫ সালের শেষ দিকে চলতি কমিটির মেয়াদ শেষে অনেক নয়া কিছু ঘটতে পারে। সময় মাত দেড় বছর। 

এদিকে সদ্য ঘোষিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে কোনো পদে না রাখায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নিজে একদমই হতাশ নন! জাহাঙ্গীর আলম বলতে চাচ্ছেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমি চালিত হই। 

একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন আমাকে কোথায় কোন পদে রাখলে দলের উপকার হবে এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন হবে। পদপদবি নিয়ে আমি ভাবি না। আমি রাস্তাঘাটের কাজ চাই, কাজ শেষ করতে চাই, সিটির ৪০ লাখ বাসিন্দাকে ভালো রাখতে চাই। গাজীপুর সিটিতে যোগাযোগ ব্যবস্হার আরও উন্নত ঘটাতে চাই।

মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল করার জন্য রাজধানী পাশের জেলা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। ঢাকার কর্মসূচিতে গাজীপুরের নেতাকর্মীরা বেশি উপস্থিত থাকেন।

বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচনের আগ মূহুর্তে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ায় তাদের প্রতিরোধে পাল্টা কর্মসূচি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সেই কর্মসূচিতে গাজীপুর জেলা থেকে জাহাঙ্গীর আলম বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সেখানে যোগ দিয়ে তা সফল করেছেন। তবে কেন জাহাঙ্গীর আলমকে এই পূর্নাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না? তাহলে কি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগে মাইনাসের রাজনীতি শুরু হয়েছে? এমন সব জল্পনা কল্পনায় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম জনকণ্ঠকে বলেন, "এই পূর্নাঙ্গ কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। যেখানে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন, সেখানে আমি থাকতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভুল বুঝিয়ে কমিটিতে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসা হয়েছে।" 

রাজপথের লড়াকু সৈনিক সাবেক ছাত্র নেতা বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ ক্ষোভ ঝেড়ে জনকণ্ঠকে বলেছেন,কমিটি হইছে খুশি হইছি, তবে ১০০ পারসেন্ট খুশি হই না, অনিয়মের মাইমেন কমিটি হয়েছে। নেহেরু-জিন্নার ভাগাভাগির ভারত পাকিস্তান কমিটি হয়েছে। 

নয়া কমিটির সহসভাপতি আবদুল হাদী শামীম বলছেন, "জগাখিচুড়ির কমিটি হয়েছে, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়নি।" 

আরেক সহসভাপতি সাবেক কাউন্সিলর ৬৯এর বঙ্গবন্ধুর বিশিষ্ট সিপাহসালার আবদুল আলীম মোল্লা বলছেন, আমি তো টঙ্গী পশ্চিম থানার সভাপতি হতে চেয়েছি, মহানগর কমিটির সহসভাপতি হতে চাইনি। এমনি ভাবে বহুজন নানা ভাবে ক্ষোভ ঝাড়ছেন এই পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে। 

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল জনকণ্ঠকে বলেন, "আমার নেতৃত্বে এই পূর্নাঙ্গ কমিটি হয় নাই। স্বীকার করছি, বিতর্কিতরা কমিটিতে জায়গা পেয়েছে। এগুলোর দায় আমি নিতে পারি না। যাদের নেতৃত্বে এই পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের শেয়ার নিতে হবে, দায়ও নিতে হবে।

 এসআর

×