ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

মানববন্ধনে ফখরুল

খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাস করে স্থগিত করা সরকারের চালাকি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৭ জুন ২০২৪

খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাস করে স্থগিত করা সরকারের চালাকি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস করে স্থগিত করা সরকারের চালাকি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
ফখরুল বলেন, গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা দীর্ঘায়িত করতেই সরকার সাজা স্থগিতের  বিষয়ে চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছরের বেশি সময় জীর্ণ-পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন। তারপর নিয়ে আসা হয় পিজি হাসপাতালে। সেখানে তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। পরে  সাজা স্থগিত করার পর তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।

এখানে একটা চালাকি আছে, চালাকিটা কি? ছয় মাস ছয় মাস করে তার সাজা স্থগিত করা হচ্ছে। তার মানে সাজা কিন্তু কমছে না। সেই সাজা আবার গুনতে হবে ভবিষ্যতে যখন তাদের প্রয়োজন হবে, এটাই হচ্ছে চালাকি। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আরও বেশি দীর্ঘায়িত করা হবে খালেদা জিয়ার সাজা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নি¤œ আদালত খালেদা জিয়াকে  পাঁচ বছর সাজা দিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালত সেই সাজা ১০ বছর করেছে। মামলাগুলো একটা সাজানো মামলা ছিল, মিথ্যা মামলা ছিল। কিন্তু মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যটা ছিল তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাকে সরিয়ে দেওয়া মানে  দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া। এটা ছোটখাট ব্যাপার নয়, এটা হচ্ছে একটা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে দেশের জন্য কি এনেছেন এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ফখরুল বলেন, প্রতিদিন সীমান্তে মানুষ হত্যা হচ্ছে। তাহলে ভারত কেমন বন্ধু? বিশ্বে কোন বন্ধু দেশ আছে তার বন্ধু দেশের মানুষকে সীমান্তে গুলি করে হত্যা
করে? সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, আপনারা অনেক কথা বলেছেন। আমি বলি, আপনারা আত্মরক্ষার জন্য যে সমস্ত কথা বলেছেন, এই সমস্ত কথা বলে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। 
ফখরুল বলেন,  দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ভারতের সঙ্গে যে সমস্ত চুক্তি করা হয়েছে, সমঝোতা করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কি রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশোনা করার জন্য পরামর্শ দেন। আমি তার কথার গুরুত্ব দিতে চাই। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সঙ্গে বিদ্রোহ করবেন না, বেঈমানি করবেন না। মানুষকে বোকা বানিয়ে, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি করার সাহস করবেন না, এমন কোনো সমঝোতা স্মারক সই করবেন না যেটা আমার দেশের, আমার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
ফখরুল বলেন, ভারতের সঙ্গে পানির ন্যায্য হিস্যার কথা কোথাও নেই, যেটা আছে সেটা ভয়াবহ। সেটা হচ্ছে তিস্তা চুক্তির জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুটোর মধ্যে দেখব কোনটা ভালো হয়। আবার এও বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারতকে যদি কাজটা দেই, তাহলে পানি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তো কি সব বোকা মানুষ এই দেশে বাস করি? প্রধানমন্ত্রী যেটা করেছেন তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা, সেটা বাতিল করে দিলেন। এবার বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, আমরা পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি, সেটা সম্পূর্ণভাবে সামগ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্দোলন।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফরিদা ইয়াসমিন, যুব দলের নেতা গোলাম মাওলা শাহিন। 
মানববন্ধনে অংশ  নেওয়া নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে থেমে থেমে স্লোগান দেন। 
নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে বিএনপি ॥  বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে দলটি। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। 
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলে আরও ২ উপদেষ্টা নিযুক্ত ॥ আন্দোলনে গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে থাকার প্রত্যয়ে গঠিত সংগঠন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেল গঠন করা হয় আগেই। এ সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই সেলে বৃহস্পতিবার আরও ২ জন উপদেষ্টা নিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন- ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আশরাফ উদ্দিন ও আলমগীর কবীর। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

×