ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

যুবদলের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২০, ১২ মে ২০২৪

সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে

খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে যুবদল

বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে যুবদল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে নতুন নতুন ফর্মুলা করা হচ্ছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গৃহপালিত দলগুলোর সঙ্গে চলে দেনদরবার। এত আসন না পেলে সে দলগুলো আবার নির্বাচন না যাওয়ারও হুমকিও দেয়। তিনি বলেন, সরকার বলে তারা নাকি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তাহলে এরশাদ ও ইয়াহিয়া কি করেছেন? তাদের আসলে কোনো লজ্জা শরম নেই। তারা দেশটাকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। তারা যেমনি চাইবে তেমনি চলবে। কিন্তু তা হবে না। জনগণ যা চাইবে সেভাবেই দেশ চলবে।
ফখরুল বলেন, আজকে নিজ দেশে থেকেও আমরা পরবাসী হয়েছি। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলে বা আসলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখা হয়। আসলে দেশ কি আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে? দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি। আজকে সারাদেশ কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া চাকরি হয় না। বিসিএস পাস করার পরও চাকরি হচ্ছে না। আজকে চাকরির জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হয়, তারা বিএনপি করে কিনা।
ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শুধু নির্যাতিত নেত্রী নন, তিনি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। সারাজীবন যিনি দেশ ও জনগণের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন আজকে প্রতিহিংসার বশীভূত সরকার তাকে বন্দি করে রেখেছে। তার সাজা হয়েছিল ৫ বছর। উচ্চ আদালতে  তা ১০ বছর করা হয়েছে। এমন মামলায় অনেকে জামিন পেলেও তাকে দেওয়া হয়নি। 
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। দেশ-বিদেশ থেকে সবাই তার মুক্তি দাবি করলেও দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তিনি মুক্ত হলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ সব শৃঙ্খল ভেঙে ফেলবে, ওপরে ফেলবে সব অন্যায় ও অবিচার। তিনি বলেন, বিএনপি যাতে উঠে দাঁড়াতে না পারে নেজন্য আটক রাখা হয়েছে হাজারো নেতাকর্মীকে। অনেককে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। আদালতকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ঈশ্বরদীতে ৯ জনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে বর্তমান সরকার ক্ষমতার টিকে থাকতে চায়। কি নিদারুণভাবে ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ প- করা হয়েছে। তবে অন্যায় করে জুলুম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। আমরা যখন যুবক ছিলাম লড়াই করে এ দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু আজ সে স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত।

ফখরুল বলেন, দেশে ২০০৮ সাল থেকে মানুষ আর ভোট দিতে পারে না। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার আবারও ভিন্ন মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চায়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, শুক্রবার ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আবার সন্ত্রাস করবেন না, তাহলে ডাবল শিক্ষা দেব। আমি বলছি, সন্ত্রাস বিএনপি করে না। আপনারা করেন। ‘মওলানা ভাসানীকে পিটিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ডেপুটি স্পিকারকে পিটিয়ে আপনারাই হত্যা করেছেন।’
ফখরুল বলেন, আজকে দুর্ভাগ্য যে জাতি গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা জন্য যুদ্ধ করেছিল সে অধিকার থেকে বাংলাদেশ আজ বঞ্চিত। আজকে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। ট্রেনের ভাড়া, বাস ভাড়া বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-পানির দাম বেড়েই চলছে। অপরদিকে লুটপাট হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, লুটপাট হচ্ছে ব্যাংক। আজকে নতুন নতুন আইন করছে লুটেরাদের স্বার্থে।
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে  আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দলের মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল, সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন প্রমুখ। 
বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থেকেই নয় আশপাশের জেলা থেকেও যুবদলের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলে হাজির হন। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সমাবেশস্থলের আশপাশে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
সাড়ে ছয় মাস পর সংবাদ সম্মেলনে আসছেন ফখরুল ॥ সাড়ে ছয় মাস পর সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ দুপুর ১২টায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে  সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন তিনি। এর আগে গতবছর ২৭ অক্টোবর এই ভেন্যুতেই সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।  
সংবাদ সম্মেলনে বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির ভার্চুয়াল স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও উপজেলা নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দলের অবস্থান জানাবেন।

×