মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সরকার পদত্যাগ না করলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে মেয়র ফজলে নূর তাপস যে কথা বলেছেন, আমরা এই ধরনের কথাকে গুরুত্ব দেই না। কারণ, অতীতে আমরা এগুলো অনেক ফেস করেছি। তাই এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না। কে কি বলল, এতে বাংলাদেশের জনগণের কিছু যায় আসে না। জনগণের লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। মেয়র তাপসের কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটাই হচ্ছে তাদের কথা বলার চরিত্র ও মানসিকতা। এটাই হচ্ছে তাদের জমিদারি ভাব। তাদের কথাবার্তা ও সব কিছুর মধ্যে একটা সন্ত্রাসী ভাব থাকে। তাই তারা এ ধরনের কথা বলে।
ফখরুল বলেন, দেশের জনগণের এখন একটাই লক্ষ্য, আর তা হচ্ছে- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাদের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না এ বিষয়টা পরীক্ষিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণ যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। এতে আবারও প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তার পরও সরকার বিদেশীদের কাছে গিয়ে বলেছে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এতে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। তাই বিদেশীরা প্রাক পর্যবেক্ষক টিম পাঠিয়েছেন। তারা সবকিছু সার্ভে করেছেন এবং সব ধরনের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এখন স্পষ্ট করে বলেছেন, এ দেশের পর্যবেক্ষক টিম পাঠানোর কোনো পরিবেশ নেই।
ফখরুল বলেন, এত প্রহসন, গ্রেপ্তার, মামলা এবং বাধার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে আমরা শেষ পর্যন্ত যাব। তবে আন্দোলনের শেষ পরিণতি কি হবে এটা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। তবে সরকার যা করছে এটি কোনোভাবেই একটি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয়।
ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে জনগণ রুখে দাঁড়াবে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। জনগণই তাদের অধিকার আদায় করবে। জনগণ তো অতীতে লড়াই ও যুদ্ধ করেই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। এরপর ১৯৯০ সালে এরশাদের শাসনামলে জনগণ লড়াই ও সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। এখনো জনগণ লড়াই-সংগ্রাম করছে গণতন্ত্রের জন্য।
সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দেশকে রক্ষার জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য ও মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য পদত্যাগ করুন। আমরা পদত্যাগের দাবি আগেই জানিয়েছি। অনুগ্রহ করে পদত্যাগ করুন। এত গ্রেপ্তার, মামলা ও অত্যাচার-নির্যাতনের পরও কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।
বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচির সঙ্গে আরও দুই দিনের কর্মসূচি ॥ সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের ১৫ দিনের কর্মসূচির সঙ্গে আবারও দুই দিনের কর্মসূচি যুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আগে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল তা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ফখরুল জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ। একই দিন বাদ জুমা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় সারাদেশের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় দোয়া মাহফিল। ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বরিশাল বিভাগে রোডমার্চ।
২৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে সারাদেশের সকল জেলা এবং মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও আমিন বাজারে সমাবেশ। ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সমাবেশ। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকায় মহিলা সমাবেশ। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে রোডমার্চ। ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। ৩ অক্টোবর ফরিদপুর বিভাগে রোডমার্চ ও সমাবেশ। ৪ অক্টোবর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন। ৫ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মীরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে রোডমার্চ।