মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
দেশ এখন ঘোর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে সব শক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই, রাষ্ট্র এখন যন্ত্রণা ও অত্যাচার-নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলো শেষ হয়ে গেছে। বিচারকরা নিজেরাই নিজেদের স্বাধীনতা শেষ করেছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, বরং ঘোরতর অন্ধকারে দেশ। সবাই মিলে এক জোট হয়ে লড়াই না করলে কীভাবে বের হবো জানি না। আজ সমগ্র জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শুধু এককভাবে গণমাধ্যমকে রক্ষা করে লাভ হবে না, রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। কারণ, রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন একটা যন্ত্রণা, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে। এ অবস্থার অবসানে জাতীয় ঐক্য দরকার।
ফখরুল বলেন, ৩০ বছর পর ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদ-, ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে অবিচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এক ঘোর অন্ধাকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্র তখনই সফল হতে পারে যখন তার তিনটা স্তম্ভই কাজ করে। কিন্তু সকল স্তম্ভই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি সোজা কথায় বলি, দেশের আত্মাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তবে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা আজ আমাদের সঙ্গে শরিক হয়েছেন, সবাই এগিয়ে এসেছেন। তাই এ অবস্থায় আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে অনেকেই বলছেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আমি বলি যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে কি না আমি জানি না। সাংবাদিকরা জানেন। কারণ তাদের সহকর্মীরা বড় বড় পত্রিকার সম্পাদক, বড় বড় চ্যানেলের এডিটর। তবে যারা বিচারক তারা এই সমাজের স্বাধীনতাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তবে আমি লজ্জা পাই, যখন টেলিভিশনে দেখি তাদের ক’জন প্রথিতযশা সম্পাদক এবং বিভিন্ন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তারা যখন এই ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যার যে কর্মযজ্ঞ তাকে সমর্থন করছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রাস্তার কর্মী, মাঠের কর্মী, মাঠের মধ্যে লড়াই করি, জেলে যাই, অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। ক’দিন আগে আমাদের ঈশ্বরদীর প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী ৩০ বছর আগে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে নাকি ঢিল-টিল মেরেছিল। ত্রিশ বছর পর বিচারকরা শাস্তি দিয়েছেন। নয়জনকে মৃত্যুদ- ও ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন। আমাদের দলের নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তাকে ৭০ বছর কারাদ- দেওয়া হয়েছে, এটা ইতিহাস। আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে। এ রকম ৬৪৮ জনকে গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, ‘এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং’ করেছে।
সম্পাদক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। দেশে আছেন এমন অনেক সম্পাদক ও সাংবাদিককে নিগৃহীত হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। কত বলব, কার কথা বলব? অত্যাচার-নির্যাতন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে এখান থেকে মুক্তি পেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, দলের সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোর্শেদ হাসান খান, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, এমএ আজিজ, আব্দুল হাই শিকাদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাকের হোসাইন, ইলিয়াস খান, মোরসালিন নোমানী, রাশেদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ॥ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ওয়েবিনারে সংযুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু, দলের নেতা অমলেন্দু অপু, সুশীল বড়–য়া, রমেশ দত্ত, তরুণ দে প্রমুখ।