ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

আজ প্রথম কাউন্সিল ॥ শমসের মবিন ও তৈমুর আলমসহ অনেকে যোগ দেবেন 

নির্বাচনের আগে নতুন চমক তৃণমূল বিএনপির

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নির্বাচনের আগে নতুন চমক তৃণমূল বিএনপির

শমসের মবিন ও তৈমুর আলম

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। রাজনীতিতে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা সমীকরণ। সাবেক বিএনপি নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত ‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে আসছে নতুন চমক! আজ মঙ্গলবার তাদের প্রথম কাউন্সিল হবে। জানা গেছে, সেদিন দলটিতে যোগ দেবেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আগে থেকে পরিচিত ও আলোচিত মুখ শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট  তৈমুর আলম খন্দকারসহ বিএনপির আরও কয়েক নেতা। 
আজ  মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল। এই কাউন্সিলে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির নামের সঙ্গে মিল থাকা তৃণমূল বিএনপিতে থাকছে নতুন চমক। দলটির শীর্ষ দুই পদে (চেয়ারম্যান ও মহাসচিব) আসতে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য (বহিষ্কৃত) এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার। শুধু তারা নন, পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং নিজে থেকে ছেড়ে দেওয়া নেতারাও এ দলে যোগ দেবেন। সেই তালিকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও আছেন।
এ প্রসঙ্গে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি তো আর আওয়ামী লীগে যোগ দেব না। সারা জীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে আসছি। আর বিএনপি আমাকে গত দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে। আমি তো আর দল ছাড়িনি। একজন বহিষ্কৃত লোক কত বছর একটা পতাকা টেনে নিতে পারে? এখন আমার পরিচয় কী? মারা গেলে আমার পরিচয় কী হবে? কোন ব্যানারে আমি বক্তব্য দেব। আমার জন্ম তো রাজপথে। যেহেতু বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমাকে এখন তৃণমূল বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। আমি সেখানেই যাচ্ছি।
তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ দুই পদের একটিতে আপনি থাকছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি শীর্ষ পদেই থাকব। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি হবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয়তাবাদী ধারা ও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে।
বিএনপির আরেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী কি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, তিনিও আমাদের সঙ্গে থাকছেন। কথা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তৃণমূল বিএনপির সম্মেলন তিনি থাকবেন। দলে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপির আরও অনেক নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শমসের মবিন চৌধুরীর কাছে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি শুনে একটা মিটিং আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। এখনো তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারা থেকে পদত্যাগ করেননি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪৫। নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালি আঁশ’। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন তার মেয়ে অন্তরা হুদা।
তৃণমূল বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য দলটির প্রথম সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক শোডাউন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপির এক নেতা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে নতুন মুখ আনা হচ্ছে। যারা এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও তৃণমূল বিএনপি অংশ নেবে। তখন বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী থাকবেন তারা এ দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তারা একটা ভালো পদে থাকবেন বলে আশা করি। আমরা এমন একটা সময় দলের নিবন্ধন পেয়েছি, সেখানে কারও আগ্রহ ছিল কি না সেটা আমি জানি না।
এক প্রশ্নের জবাবে অন্তরা হুদা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আবার তাদের কর্মকা-কে সমর্থন করি- সেটাও নয়। বিএনপি হয়তো নির্বাচনে আসবে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সব দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলেই আমরা সরকারের দালাল হয়ে গেছি- এটাও তো ঠিক নয়। তবে, আমরা কোনো জোটে যাব কি না, সেটি এখনো ঠিক করিনি।
এদিকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নিজ চেম্বারে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আক্ষেপ থেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট  তৈমুর আলম খন্দকার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমি বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমার ছোট ভাই (কাউন্সিলর খোরশেদ আলম) ফোন দিয়ে কান্না করছেন। মেয়ে ব্যারিস্টার মার-ই য়াম খন্দকার অভিমান করে আছে। কিন্তু আমার তো করার কিছু নেই! দেড় বছর আগে বিএনপি বহিষ্কার করেছে। তারপর বিএনপির কেউ একটিবারের জন্য ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেয়নি। কোনো মূল্যায়ন করেনি। এখন আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। নিজের পরিচয় দেওয়ার জন্য তো একটি প্লাটফর্ম দরকার।
দল আমার প্রতি সুবিচার করেছে, নাকি অবিচার করেছে, জাতি সেটা দেখবে। আমাকে দেড় বছর আগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপর একদিনের জন্যও ডাকেনি। এখন ডাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। ছোট ভাই বিএনপিতে আছে, তারা বিএনপি করবে। আমার ১৪ গোষ্ঠী বিএনপির সঙ্গে জড়িত।

×