মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
দেশে গণতন্ত্র ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করতে তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে এবং তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এই আন্দোলনে তিনি তরুণদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন। সোমবার বিকেলে বগুড়া সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ ও
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এ সময় সমাবেশে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবী দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের আগে বেলা দুটোয় বগুড়ার চারদিক থেকে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমবেত হতে থাকে। তাদের কণ্ঠে ছিল বিএনপির স্লোগান। শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে কয়েকটি রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। এক পর্যায়ে নেতারা বলতে থাকেন বগুড়ার বাইরের বাস বন্ধ করা হয়েছে। তার পরও সেন্ট্রাল হাই স্কুলের মাঠ ও সংলগ্ন ঈদগাহে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। বিকেলের মধ্যে মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল চারটায় তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শেষ হয়। এ সময় প্রধান সড়ক জ্যামের কবলে পড়ে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্যের শুরুতে তারুন্যের শক্তিকে বলিয়ান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার হত্যা-গুমের রাজনীতি এবং লুটপাটের রাজনীতিতে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। সেই কিনার থেকে দেশকে রক্ষার তাগিদ দিয়ে তরুণ শক্তিকে মাঠে নামতে বলেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবারের’ পঙ্ক্তি উল্লেখ করে বলেনÑ আজকের তরুণদের সেই দীক্ষায় এগিয়ে যেতে হবে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। তারুণ্যের এই শক্তি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। ১৯৯০ সালে যেমনভাবে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল একই ভাবে এই লুটপাটের সরকারের পতন ঘটানো হবে।
তিনি বর্তমান বাজেটের কঠোর সমালোচনা করেনÑ এই বাজেটে গরিবের পকেট থেকে টাকা কাটা হবে। মোবাইল ফোনের কল রেটের উদাহরন দিয়ে বলেন টাকা তুলতেই শেষ হয়ে যায়। এই টাকা কার পকেটে যায়। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে টাকা উঠালেই বড় একটি অংশ কেটে নেওয়া হয়। এই অর্থ কোথায় যায়! তা দেশের মানুষ জানে। সবই লুটপাটের থাবায় পড়েছে। তিনি সরকারকে সাবধান করে দেন ‘হীরক রাজা দেশে’ ছবির উদাহারণ দিয়েÑ বলেন ওই ছবিতে হীরক রাজা সব লুটেপুটে খাচ্ছিল। যন্তরমন্তর ঘরে ঢুকিয়ে মগজ ধোলাই করছিল। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা গেল হীরক রাজ্যের মানুষ রাজার মূর্তি বানিয়ে দড়ি ধরে টেনে বলছে ‘দড়ি ধরে মার টান রাজা হবে খান খান।’
মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে তিনি বলেন- সরকার যে কখন কি বলছে তা তারা নিজেরাই জানে না। বুঝতেও পারে না। নাম প্রকাশ না করে একজন নেতার বিষয়ে পুরান ঢাকার একটি গল্প টেনে বলেন, ওদের কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারুণ্যের এই সমাবেশকে জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার ইতিহাসে অন্যতম বলে উদাহারণ দিয়ে বলেন- ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে তরুণদের লড়াইয়ে মাঠে থাকতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটে। তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার প্রশ্নে তিনি বলেন- সংবিধান কাটাছেঁড়া করে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে। তা পুনরায় ফিরিয়ে এনে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে ভোটাধিকারের দাবি জানান।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আহসানুল হাবিব দুলু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা প্রমুখ।