মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
আওয়ামী লীগের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এখন প্রমাদ গুনছেন বলেও বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি আয়োজিত এই পদযাত্রাকে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা দাবি করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এদিন পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশের পর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে জুরাইন রেলগেটের দিক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। আগের দিনের মতো সোমবারও পদযাত্রা কর্মসূচিটি নীরব থাকেনি। ব্যানার ফেস্টুন ও প্লাকার্ডে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সবাই সরকারবিরোধী সেøাগান দিতে থাকেন। বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিটি শ্যামবাজারে এসে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। এ ছাড়া আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এর মাধ্যমেই শেষ হবে বিএনপির চারদিনব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি।
উদ্বোধনকালে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এই পদযাত্রা গণতন্ত্রের জয়যাত্রা, সভ্যতার জয়যাত্রা, মানুষের অধিকার আদায় করার জয়যাত্রা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জয়যাত্রা, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জয়যাত্রা।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আজকে চালের দাম কত হয়েছে? ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল না, এখন কত খাচ্ছেন? ডালের দাম কত, লবণের দাম কত, আটার দাম কত? ফখরুল বলেন, পুরান ঢাকাসহ সারাদেশে গ্যাস নেই, সব খেয়ে ফেলেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে। আর সেই টাকা তারা লুট করে বিদেশে পাচার করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী সফরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ না-কি পালায় না। এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র) আছেন, ভালো বলতে পারবেন, এক এগারোতে কারা কারা পালিয়েছিল সবাই জানে। কিন্তু পালায়নি একজন, তিনি হলেন খালেদা জিয়া। তিনি পরিষ্কার বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো জায়গা নেই। এই দেশ আমার, এই মাটি আমার। আমার জন্ম এখানে মরলেও এখানে মরব। এই দেশের মানুষ সব জানে, কে কখন কোথায় পালায়, কেমন করে পালায়, সবাই জানে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে গত ১৪/১৫ বছর ধরে এ দেশের মানুষের ওপরে যে অত্যাচার করছেন, সেই অত্যাচারে মানুষের পিঠ এমনভাবে দেয়ালে ঠেকে গেছে আপনারা আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাবেন না।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব-পালাবেন কোনদিকে। একটা কবিতা আছে-কোনদিকে পালাবে তুমি। কোনো দিকে পালাবার পথ নাই। উত্তরে উত্তর পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। কোনদিকে পালাবে তুমি। তাই এখনো বলছি, সময় আছে আমাদের যে ১০ দফা দাবি, এই দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। সংসদ বাতিল করুন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার চালু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে, নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটা নির্বাচন করুন, যে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারবে, ভোট দিতে পারবে।
ফখরুল বলেন, গত দুইটা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন? কেউ ভোট দেয়নি। নিজেরা ভোট করেছে। একটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরেকটা করেছে আগের রাতে। এই ভোট আর জনগণ চায় না। আপনাদের হাতে ভোট নিরাপদ কেমন করে? এই যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের এমপি সাত্তার সাহেব পদত্যাগ করলেন। তারপর তিনি নিজে ভোট করতে গেলেন। আমরা তাকে বহিষ্কার করলাম। এখন তাকে জয়লাভ করানোর জন্য সমস্ত নীতি- নৈতিকতা বাদ দিয়ে আপনারা আপনাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীকে গুম করার অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না, গুম। অর্থাৎ সাত্তারকে জেতানোর জন্য এখন সমস্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। আপনারা মাগুরার কথা বলেন? ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মাগুরার দাদা বানিয়েছেন। সুতরাং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, নবী উল্লাহ নবী, ইশরাক হোসেন, সাইফুল আলম নীরব, মীর নেওয়াজ আলী, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।