ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

৭৬ বছরে পা দিল ছাত্রলীগ, লক্ষ্য এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

৭৬ বছরে পা দিল ছাত্রলীগ, লক্ষ্য এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’

ছাত্রলীগ

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীনতার পর অনেক সংকটে ছাত্রলীগ ছিল আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর প্রাণ। রাজপথের আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও দেশরতœ শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ এই স্লোগানে আজ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পাশাপাশি বছরব্যাপী শিক্ষার্থীবান্ধব নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।

১৯৪৮ সালে আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বগুণে একঝাক মেধাবী তরুণের হাত ধরে সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পাকিস্তান আমলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। স্বাধীনতার পরপরই এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বারান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক-শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি, ৭০-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র উত্তোরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়া অনেক ছাত্রনেতা পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে। স্বয়ং টানা তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তিনি ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সাজসাজ রব। লাইটিং, পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রঙিন হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বর্ণাঢ্য আয়োজন আর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে বলে জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ বুধবার সকাল ৬ টায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে ৮ টায় ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর সকাল ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। 

জনভোগান্তি এড়াতে ৬ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক সবজি- ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করবে ছাত্রলীগ। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ শীর্ষক মতবিনিময় সভা পরিচালনা, কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পুনর্মিলনীর আয়োজন করবে সংগঠনটি।

বছরব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচিগুলো হলো, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ, স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট, সকল সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও জাতীয়ভাবে স্মার্ট ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ‘শর্ট ফিল্ম কম্পিটিশন’  আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘উন্নয়ন কুইজ’ ও ‘নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা, সজীব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ এর উপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স, স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে চা চক্র, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আমাদের দেশ, আমাদের স্বপ্ন’ শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক মৃত্যুঘন্টা নিশ্চিত করবে দাবি করে  ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের কবর রচনা করেছিল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ। আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে অশুভ ও অন্ধকারের প্রতিনিধিত্বকারী বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক মৃত্যুঘণ্টা আমরা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ নিশ্চিত করতে চাই।

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাধ্যমে আমরা শপথ গ্রহণ করতে চাই যে, আমরা একটা লড়াই করতে চাই এবং এই লড়াইয়ের শেষ আমরা দেখতে চাই। এই লড়াই যারা জাতির পিতার হত্যাকারী, দেশরতœ শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করেছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড- পরিচালনা করেছে, বাংলাদেশে দুর্নীতিকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়েছে এবং দুর্নীতিবাজদের যারা পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে।

 

মুনতাসির জিহাদ

সম্পর্কিত বিষয়:

×