বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লগো
সাড়ে চার বছর পর আগামী ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রধানতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন।
বহুল প্রতিক্ষীত এই সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নিকট তদবির-লবিং এ ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। সরগরম হয়েছে উঠেছে মধুর ক্যান্টিন সহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পয়েন্টগুলো।
কারা আসতে পারেন শীর্ষ নেতৃত্বে- এ নিয়ে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদপ্রত্যাশীদের আশা নির্বাচনের দিকে না গিয়ে এবারও তিনিই শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করবেন।
তাই ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা ও অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চান পদপ্রত্যাশীরা।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক সক্ষমতা সম্পন্ন, ‘ক্লিন ইমেজ’, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং বিভিন্ন সংকটে মানবিক কাজে যারা সক্রিয় ছিলেন; তারাই আগামীর নেতৃত্ব পাবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনকালীন সংকটময় পরিস্থিতিতে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিতে পারবে এমন পরিপক্ব কমিটি গঠন করা উচিত। সাংগাঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টা বিবেচনায় নিবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
বলা বাহুল্য, নির্দিষ্ট কয়েকটি বিভাগ থেকেই বারবার নেতৃত্ব এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগ। এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
অঞ্চলভিত্তিতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন: বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সহ সভাপতি রাকিব হোসেন ও কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব, গ্রন্থনা-প্রকাশনা সম্পাদক আবুল হাসনাত হিমেল।
বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মিরাজ, সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), উপবিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের, উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও উপসাহিত্য সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত।
ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস, সহ সম্পাদক রাকিব সিরাজী ও স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপসম্পাদক শাকের আহমেদ আল আমিন। খুলনা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার আলোচনায় আছেন মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হাসান শিশির, জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত, শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
ছাত্রলীগের ৭৪ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ দুই পদে কখনো নারী নেতৃত্ব দেখা যায় নি। সংগঠনের গত দুই সম্মেলনেও একাধিক নারী নেতৃত্ব আলোচনার শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ দায়িত্ব পান নি। তবে ছাত্রলীগে নারী নেতৃত্বের প্রত্যাশা তাই দিন দিন বাড়ছে। ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকদার ও ফরিদা পারভীন, উপ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রনক জাহান রাইন।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই দুজন দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। তখন ওই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়া হয়।