রওশন এরশাদ
চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে সবাইকে নিয়ে কাজ করার কথা জানালেন জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্রন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দলে ঐক্য ধরে রাখতে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসারও কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রায় ৫ মাস ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেশে ফেরেন এরশাদপত্নী। যদিও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রওশন এরশাদকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে যাননি জিএম কাদেরসহ তার বলয়ের নেতারা।
তবে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ রওশন বলয়ের লোকজন অভ্যর্থনা জানাতে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। জি এম কাদের বিমানবন্দরে না গেলেও বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন ভাবি রওশন এরশাদ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদপত্মী বলেন, ‘আসেনি তো, কী হয়েছে? ওনার কোনো সমস্যা আছে মনে হয়। এতে আমি কোনও সমস্যা দেখছি না।’
শুধু তাই নয়, জিএম কাদেরের সঙ্গে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেও জানান। আগামীতে দুজন একসঙ্গে চলার কথাও বলেন তিনি।
গুঞ্জন ছিল ঢাকায় ফিরে জিএম কাদেরের মনোনীত রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী বদলের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু রওশন সেদিকে না গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নামই ঘোষণা দেন।
রওশন এরশাদ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় দফায় গত ৫ জুলাই চিকিৎসার উদ্দেশে থাইল্যান্ডে যান। প্রায় ৫ মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট বার্ধক্যজনিত নানা রোগে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে টানা ৭৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি।
অবস্থার অবনতি হলে রওশন এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ নভেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
নিজের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে রওশন বলেন, আমি এখন ঠিক আছি, কিন্তু পায়ে কিছু সমস্যা আছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি।
ব্যাংককে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিমানবন্দরে নামার পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য রাখেন রওশন এরশাদ। বলেন, ‘আমি সবসময় জাপার ঐক্য চাই। আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি গত ৩২ বছরে দলের নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না।’
দলের নেতাদের সঙ্গে বসার কথা জানিয়ে এরশাদপত্মী বলেন, আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি। সব এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসব। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব।
পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। এ সময় বিএনপির সময়ে এরশাদ পরিবার ও জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রওশন।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজারও নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেওয়া হয়নি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টার কথা তুলে ধরেন তিনি। তবে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বেশ কিছু বিষয়ে ত্রুটি আছে বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ।
এমএস