
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র একটু দূরে অবস্থান হলেও শিল্প রসিকদের কাছে রয়েছে প্রদর্শনালয়টির বিশেষ গুরুত্ব। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রদর্শনালয়টির আয়োজনসমূহ। সব সময়ই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের শিল্পায়োজনের মাধ্যমে গ্যালারিটি কাছে টেনেছে সাধারণ দশর্ক থেকে শিল্প-সংগ্রাহকদের। বলছি উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের কুড়ি নং বাড়ির ঠিকানাযুক্ত গ্যালারি কায়ার কথা। বর্তমানে প্রদর্শনালয়টিতে চলছে বৈচিত্র্যময় এক শিল্পায়োজন। প্রখ্যাত শিল্পীদের সৃজিত শিল্পকর্মে সজ্জিত আয়োজনটির শিরোনাম অ্যাফোটের্বল স্প্রিং কিংবা সাশ্রয়ী বসন্ত। শিরোনামের সঙ্গে চমৎকার মিল রয়েছে প্রদর্শনীটির। সেই সুবাদে শিল্পরসিক থেকে সংগ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে শিল্পকর্ম সংগ্রহের সুযোহ পাবেন এই আয়োজন থেকে। বসন্তের আবাহনী এই আয়োজন থেকে গড়া হয়েছে শিল্পের ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা। সেই সমঝোতা অনুসারে স্বল্পমূল্যে শিল্প পৌঁছে যাবে শিল্পানুরাগীর বাসগৃহে। শিল্পী ও শিল্পের সঙ্গে গড়ে উঠবে সংগ্রাহকের সেতুবন্ধন।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে শিল্পী ও লেখক সৈয়দ গোলাম দস্তগীর বলেন, গ্যালারি কায়ার এ আয়োজন যেন শিল্পের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি ধাপ। কম দামে শিল্প বিক্রি করলে কি শিল্পীর ক্ষতি হয়? মোটেও না। বরং এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা। শিল্পী চান, তার কাজ মানুষের ঘরে জায়গা পাক। অন্যদিকে গ্যালারিও সংগ্রাহকদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। এতে নবীন সংগ্রাহকরা শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়, পুরোনো সংগ্রাহকদের সংগ্রহ বিস্তৃত হয়। ফলে শিল্পের বাজারে আসে নতুন শ্বাস, নতুন প্রাণ।
এই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে দেশের বরেণ্য থেকে প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম। সঙ্গে রয়েছে প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রকরদের কাজ। শুধু কি তাই! ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের চিত্রিত চিত্রকর্মও ঝুলছে গ্যালারির দেয়ালে। এসব ছবিতে উপস্থাপিত হয়েছে বিবিধ বিষয়। সেই সূত্রে ক্যানভাসে উঠে এসেছে প্রতিকৃতি কিংবা মুখচ্ছবি থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্যময়। আছে জ্যামিতিক ফর্মের আঁকা মনোমুগ্ধকর চিত্রপট। কোনো ছবিতে রঙের বৈভব ও রেখার টানে মূর্ত হয়েছে আবহমান গ্রাম বাংলার নারী। রয়েছে সমুদ্রের নীল জলে সাম্পানের ভেসে বেড়ানোর সুন্দর দৃশ্যকল্পময় ক্যানভাস। কোনো চিত্রপটে মূর্ত হয়েছে লোকজ বাংলার অনুষঙ্গের সঙ্গে পল্লীবধূর সহাবস্থান। আবার কোনো ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে পাহাড়ি জীবন থেকে শহর ঢাকার পুরোনো দিনের গল্প। জলরং থেকে অ্যাক্রেলিক, মিশ্র মাধ্যম, চারকোল, এচিং, কাঠখোদাই, লিনোকাটসহ নানা মাধ্যমে আঁকা এসব ছবি।
সব মিলিয়ে ৩৩ চিত্রকরের চিত্রকর্মে সেজেছে এই শিল্পায়োজন। এই শিল্পীরা হলেন মুর্তজা বশীর, সনৎ কর, লাল প্রসাদ শাহ, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, আবুদস শাকুর শাহ, শহীদ কবির, আবুল বারক্ আলভী, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, চন্দ্র শেখর দে, আদিত্য বসাক, জামাল আহমেদ, রণজিৎ দাস, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মোহাম্মদ ইকবাল, আলপ্তগীন তুযষার, আনিসুজ্জামান, নগরবাসী বর্মণ, অরূপ সিনহা, আশরাফুল হাসান, কামরুজ্জামান সাগর, বিপ্লব দাস, জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য, আবদুল্লাহ আল বশীর, শাহনুর মামুন, সুমন ওয়াহেদ ও সোহাগ পারভেজ।
৭৯টি শিল্পকর্মে সজ্জিত এই প্রদর্শনী চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সাজিদ