
সম্পাদকীয়
শহর-নগর, বন্দর, মফস্বল কিংবা গ্রাম কোথায় নেই ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও ইজিবাইক। দাবড়ে বেড়াচ্ছে মেগাসিটি ঢাকার অলিগলি পথ মাড়িয়ে ভিআইপি সড়ক। এমনকি দেশে সর্বাধিক ব্যস্ত মহাসড়কেও তাদের উপস্থিতি নগণ্য নয়। দেশের মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের গতি থাকে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার। ফলে, দেশের সর্বত্র, প্রায় প্রতিনিয়তই অটোরিক্সা-ইজিবাইকের সঙ্গে পরিবহনের সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটছে মানুষের।
ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা-ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর অটোরিক্সা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনগুলো বন্ধ করতে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে ডিএমপি অটোরিক্সার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা করেছে। শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে এবং সেসব বন্ধ করে দেওয়া হবে। যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় যত্রতত্র অটোরিক্সাগুলোর চলাচল নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এ উদ্যোগ। এদিকে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ইজিবাইক ও অটোরিক্সা মালিক ও চালকরা। শহরের অলিগলি, পথে-ঘাটে কিংবা গ্রামের বাজারে শোরুম দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে অটোরিক্সা। এমনকি নগদ ক্রয়ে অক্ষম ব্যক্তিদের কিস্তির মাধ্যমে সহজ শর্তে অটোরিক্সা-ইজিবাইক দেওয়া হয়।
এতে শুধু বিদ্যুৎ অপচয় নয়, প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসব করে যাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে অটোরিক্সাগুলো পরিবেশবান্ধব এবং বায়ু দূষণমুক্ত যান। এটি মধ্যবিত্ত ও গরিবের প্রাইভেটকার- এ কথাটি যেমন সত্য, তেমনি সড়কে মৃত্যুর অন্যতম কারণও এই ক্ষুদ্রযানটি।
ঢাকাসহ দেশের অটোরিক্সার অধিকাংশ ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, যা মোটেও নিরাপদ নয়। অটোরিক্সায় চার্জ দিতে গিয়েও ঘটেছে দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকে। ফলে, বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েই চলছে। জনগণের সাধারণ চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে অটোরিক্সা-ইজিবাইক। বগুড়া একটি ছোট জেলা শহর। এখানে প্রায় দেড় লাখ অটোরিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ শহরে ৬০৮টি ইজিবাইক চার্জ স্টেশন রয়েছে। দিনে ৮৫-৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে এ শহরে। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অটোরিক্সার চার্জে ব্যবহার হয়, সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে বগুড়া শহরের বাসিন্দাদের একদিনের বিদ্যুৎ চাহিদা নিবারণ করা যায়। এমন চিত্র গোটা বাংলাদেশের। বেকারত্বের কারণে দিন দিন অটোরিক্সার সংখ্যা বাড়ছে। এখন শিক্ষিত যুবকরাও অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আবহাওয়া ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে বিদ্যুতের বাড়ছে চাহিদাও। ফলে, দেশব্যাপী লোডশেডিং অত্যাসন্ন। সরকারকে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও বেকার যুবকদের কথা মাথায় রেখে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে অটোরিক্সার বিষয়ে।