
সম্পাদকীয়
বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। বিশ্ব ব্যাংক এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-পরিসংখ্যানও উপস্থাপন করেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কম। নেপাল ও মালদ্বীপে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে। ভুটানের হিসাব পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এক সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন দেখা গেলেও বর্তমানে দেশগুলোতে তা নেতিবাচক। অর্থাৎ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ‘মাইনাস’ অর্থাৎ, মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার চিত্রও একই। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস বা নেতিবাচক।
উল্লেখ্য, বিশ্ব ব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ টানা দুই বছর থেকে অবস্থান করছে ‘লাল শ্রেণিতে’। এ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ফলে, সুফল পেয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি তথা খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিষয়টি স্বীকার করে নিতে সময়ক্ষেপণ করেছে। বিগত সরকারের আমলে ডলার বিনিময় হারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গুরুত্ব দিয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এর জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিয়েছে।
গত কয়েক মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও বর্তমানে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এতে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর পার করেছে অনেক আগেই। সার্বিক মূল্যস্ফীতিও দুই অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে গরিব আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরা শামিল হচ্ছেন নিম্নবিত্তের কাতারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বহু মানুষ।
যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেভাবে বাড়ছে না আয়। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। দরকার রাজস্ব নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সমন্বিত উদ্যোগ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ২-৫ শতাংশের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ৭-১০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করলেই বিপদের আশঙ্কা। কোরবানির ঈদ আসন্ন। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ, আদা, গরম মসলাসহ নানা জিনিসের দাম বাড়িয়েছে অযৌক্তিকভাবে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হচ্ছে ব্যাহত। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিবিএস কর্তৃক মূল্যস্ফীতির যে হিসাব পাওয়া যায়, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি।
আবার শহরাঞ্চল থেকে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও দূর করতে হবে অঞ্চলভেদে মূল্যস্ফীতির তারতম্য। নতুন অর্থবছরের পরিকল্পিত বাজেট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলেই প্রত্যাশা।