ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

৭০ ভিআইপি পাচারকারী

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

৭০ ভিআইপি পাচারকারী

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৭০ ভিআইপিকে চিহ্নিত করেছে, যারা দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে বিনিয়োগ করেছে দুবাইতে। সংস্থাটি পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চেয়েছে। উল্লেখ্য, দুদক তার অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যে কোনো নথিপত্র তলব করতে পারে এবং দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। পাচারকারীরা এ বিপুল সম্পত্তি কিনেছে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাচার করে। গোল্ডেন ভিসায় সম্পদ গড়েছেন ৪৫৯ বাংলাদেশী। বিগত আওয়ামী শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বছরে গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি- সে হিসেবে মোট ২৮ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির কাছ থেকে এহেন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, আর্থিক খাতের অসাধু রাঘববোয়াল ব্যবসায়ী, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
দেশের সম্পদ পাচার চক্রে জড়িত বৃহৎ দশটি ব্যবসায়ী গ্রুপও জড়িত। এসব গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অধীনে যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যকে নির্মোহ চিত্তে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সামনে আগাতে হবে।
উপসাগরীয় দেশগুলোয় পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পদ কেনার বিষয়টির তথ্য তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ। ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য লুকিয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশী ৩১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসন সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব সম্পদের মধ্যে ৬৪টি অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনায় এবং ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যেখানে ১০০টি ভিলা এবং কমপক্ষে ৫টি ভবনের মালিক বাংলাদেশী। চার থেকে পাঁচজন বাংলাদেশী প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। অবশ্য প্রতিবেদনে কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
বিগত দেড় দশকের বেশি সময়ে দেশের সম্পদের একটি বিশাল অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ চলে যাওয়াকে বলে পুঁজি পাচার। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থপাচার ঠেকাতে ৭টি সংস্থা- সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আমরা আশা করব, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।

প্যানেল

×