ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

অতিষ্ঠ জনজীবন

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

অতিষ্ঠ জনজীবন

চৈত্র মাস থেকে সারা দেশে বইতে শুরু করেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আবহওয়াবিদরা বলছেন, এবারেও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে নতুন বছরের বৈশাখের মাঝামাঝি অতিবাহিত হলেও চৈত্র-বৈশাখের চিরাচরিত ঐতিহ্য কালবৈশাখী, বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের দেখা নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া গেলেও তা যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত নয়। আমের গুটি, কাঁঠালের মুচি, লিচুর কুঁড়ি শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে খরায়। কৃষক ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় বোরো ধান আগাম কেটে নিলেও সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ গরমে ও আর্দ্রতায়। ফলে স্বভাবতই বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। তবে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত গ্যাস, কয়লা, জ্বালানি সংকটসহ দফায় দফায় এলএনজি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং।
তবে আশা ও আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা। শনিবার মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে লোডশেডিং এবারও কমানো যাবে না। তবে সীমিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। চলতি গ্রীষ্মে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর জন্য আমদানি করা হচ্ছে অতিরিক্ত এলএনজি। কিছু প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামও কম। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে না। সে অবস্থায় লোডশেডিং থাকবে সহনীয় মাত্রায়।
একদিকে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে দফায় দফায় যখন তখন লোডশেডিং প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ ও অসুস্থ করে তুলছে জনজীবনকে। খুব শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আশু বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও নেই। তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। গ্রামগঞ্জের দুরবস্থাও সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে মধ্যরাতেও উপদ্রব বেড়ে যায় লোডশেডিংয়ের। কেননা, তখন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অথচ উৎপাদন কম হয়। বর্তমানে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে আরও অন্তত কিছু দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জনগণকে বলা হয়েছে ধৈর্য ধারণের। প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য যথাযথ প্রস্তুতির অভাব এবং অদক্ষতার দায় দেশের জনসাধারণকে বহন করতে হবে কেন?
অভ্যন্তরীণ মজুত থেকেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনুরূপ হয়েছে কয়লার ক্ষেত্রেও। এমতাবস্থায় পরিবেশবিদরা যাই বলুক না কেন, দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে অবিলম্বে কয়লা উত্তোলন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এর জরুরি ব্যবহার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা। কেননা ইতোমধ্যে ব্যাহত হয়েছে কলকারখানার উৎপাদনও।
বারবার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যন্ত্রপাতিসহ রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিও। এলএনজিসহ জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত ডলার না দেওয়ায় গ্যাস-কয়লা-এলএনজিসহ অন্যবিধ জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না নিয়মিত। সে অবস্থায় বিদ্যুৎ সমস্যায় আশু সমাধানে দেশীয় কয়লাখনির মজুত ব্যবহার এবং গ্যাসকূপ খননের বিকল্প নেই।

প্যানেল

×