
মহাসড়কে বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, যাত্রীদের অজ্ঞান করে সব লুটে নেওয়া- অপরাধের যেন শেষ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনে কতটা তৎপর, সেটি নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন ওঠে। তবে একটা কথা না মানলেই নয় যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে পুলিশ বাহিনীতে জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে সমাজে অপরাধ হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবু মহাসড়কের অপরাধসমূহ, বিশেষ করে ডাকাতি ও ধর্ষণ কমানো যাচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের এমন কোনো মহাসড়ক বাদ নেই, যেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। সকল মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ডাকাত দলের হানায় আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। তবে ডাকাতির ঘটনা অনেক হলেও মামলা এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বলা চলে, মহাসড়কগুলোতে এখন দিনে-রাতে ডাকাতির ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ তিন মাসে দেশের ৮টি মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪১ জনকে। দেশের ৮টি হাইওয়ের মধ্যে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটার এলাকায় ১৪২৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য হাইওয়েও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। উল্লেখ করা দরকার, নৈশকালীন চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের একাধিক ঘটনা ইতোপূর্বে সংঘটিত হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্পাদকীয় কলামে এসব ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ রাখা হয়েছে বারবার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বর্তমানে কি দুর্বলতা রয়েছে? সাধারণত ডাকাতি শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাস থেকে নেমে যেত ডাকাতরা। এখন এর বড় ধরনের ব্যতিক্রম ঘটছে এবং কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। ডাকাতদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে, কিংবা বলা চলে তাদের প্রতিরোধের মুখে পড়া কিংবা ধরা পড়ার ঝুঁকি কমে এসেছে। পূর্বাপর প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা গ্রহণে তারা এগিয়ে গেছে।
বাসের সব যাত্রীকে জিম্মি করে কয়েক ঘণ্টা ধরে ডাকাতি দেশের সড়ক নিরাপত্তার বড় ধরনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরেছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সড়ক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনী সিসিক্যামেরা স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা আশ্বস্ত হওয়ার মতোই। আমরা মনে করি, অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরা তখনই কার্যকর হতে পারে যখন পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেইসঙ্গে পুলিশের সদিচ্ছা, সক্রিয়তা, এবং গতিময়তাও জরুরি। আশা করা যায়, মহাসড়কের অপরাধ দমনে আগামী দিনগুলোয় কর্তৃপক্ষ আরও সফলতার পরিচয় দেবে।
প্যানেল