
বাংলাদেশে চলতি বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অতি দারিদ্র্র্যের হার বেড়ে হতে পারে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ‘বিশ্বব্যাংক ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্য। কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, কিছু মানুষের ক্রমাগত প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, দুর্বল শ্রমবাজার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থর গতি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রান্তে কিছু ক্ষেত্রে যেমন- খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ উদাহরণত- পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ইত্যাদি বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করলেও একথাও স্বীকার করতে হবে যে, মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্যের কারণে দারিদ্র্য ঝুঁকিও বেড়েছে। কিছু মানুষ যেমন ফুলেফেঁঁপে অতি ধনী হয়েছে, তেমনি সমাজের নিচুতলার মানুষের আয়ও কমেছে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক ঝুঁকি তৈরি করেছে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আকস্মিক মহামারি করোনা ভাইরাস, অনতিপরেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিন ও লেবাননে উপর্যুপরি হামলা ও হানাহানি। ফলে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রায় বিরাজ করছে এক চরম অনিশ্চয়তা, যার অনিবার্য প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা, অত্যধিক তাপপ্রবাহ ইত্যাদি তো আছেই। দারিদ্র্য নিরসনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও বর্তমানে দেশে প্রতি পাঁচটি অ-দরিদ্র (নন-পুওর) পরিবারের মধ্যে একটি রয়েছে দরিদ্র হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে। এর পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ। এর পাশাপাশি উচ্চ ঝুঁকিতে না থাকলেও প্রায় অর্ধেক অ-দরিদ্র বা নন-পুওর পরিবারের পুনরায় দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য সরকার গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় কিছু মৌলিক পরিষেবা সহজলভ্য হওয়ায় তা দারিদ্র্য পরিস্থিতি কমাতে অবদান রেখেছে। তবে এর পরিমাণ খুব কম- মাত্র ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর কারণও উপস্থাপন করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত কয়েক মাস ধরে বিরাজমান অতি মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা। প্রধানত এ কারণেই প্রতিবছর সুবিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চলসহ নদীভাঙন কবলিত এলাকায় বাড়ছে দারিদ্র্য ঝুঁকি। উল্লেখ্য, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য ঝুঁকি বেশি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাড়ে ৬ শতাংশ দরিদ্র পরিবার তাদের সম্পদ বিক্রি করে এবং সাড়ে ১৬ শতাংশ দরিদ্র পরিবার ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। এর পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা তো রয়েছেই। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সুপারিশে বলা হয়েছে যে, টেকসই উন্নয়নের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত শিক্ষায় বিনিয়োগ, সরবরাহ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি সর্বোপরি জাতীয় প্রবৃদ্ধির সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন। তা না হলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
প্যানেল