
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আরেকটি বর্ণিল বিদেশ সফর সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো। আর্থনা সম্মেলন উপলক্ষে চারদিনের কাতার সফরেও তিনি বাজিমাত করলেন। আরবি আর্থনা শব্দের অর্থ আমাদের উত্তরাধিকার (ঙঁৎ খবমধপু)। কাতার ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২৩ সালের মার্চে দোহায় প্রথম আর্থনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারও গত ২২-২৩ এপ্রিল দোহাতেই দ্বিতীয় আর্থনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আর্থনা সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলোÑ পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতির লক্ষ্যে ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয় ঘটিয়ে বিশ্ববাসীর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। বিশেষ করে প্রচণ্ড উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলোর পরিবেশ রক্ষা করে ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবন প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আর্থনা সম্মেলন মূলত একটি আলোচনা মঞ্চ (ডায়ালগ প্ল্যাটফর্ম)। এই আলোচনা মঞ্চের মাধ্যমে বিশ্বের উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত টেকসই উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। এবারের দ্বিতীয় আর্থনা সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলÑ স্থায়িত্ব, নবউদ্ভাবন ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা।
প্রধান উপদেষ্টা গত ২১ এপ্রিল রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছে সেখানে ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আর্থনা সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে বক্তৃতা দানকালে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে।’ ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন কীভাবে বদলে দেওয়া সম্ভব আর্থনা সম্মেলনে তিনি সেই গল্প শোনান। প্রধান উপদেষ্টা ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গা সংকট ভুলে না যেতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বহু বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। যার ফলে সমাজ, অর্থনীতি এবং পরিবেশের ওপর বিরাট প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের একত্রিত হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ’বিশ্বকে মানবিক সংকট উপেক্ষা করা চলবে না, যা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। দায়মুক্তি এবং মানবাধিকারের প্রতি স্পষ্ট অবহেলা বিশ্বের যে কোনো স্থানে উন্নয়নের জন্য হুমকি। ফিলিস্তিনে চলমান দুর্ভোগ শুধু একটি অঞ্চলের বিষয় নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগ। ফিলিস্তিনিরা যেন অবহেলিত না হয়।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২২ এপ্রিল আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে কাতার রাজপরিবারের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাতারের আমিরের মা ও কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখা মোজা বিনতে নাসের, আমিরের বোন ও কাতার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন-সিইও শেখা হিন্দ বিনতে হামাদ এবং কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপার্সন শেখ থানি বিন হামাদ। অধ্যাপক ইউনূস ও আমিরের মা শেখা মোজা বিনতে নাসেরের মধ্যকার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস ও আমিরের বোন শেখা হিন্দ বিনতে হামাদের মধ্যকার বৈঠকে বাংলাদেশী নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় কাতার ফাউন্ডেশন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ উপস্থিত থাকেন। উল্লেখ্য, শেখা হিন্দ হলেন কাতারের একজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদ। বাংলাদেশী চার নারী ক্রীড়াবিদের গল্প শুনে শেখা হিন্দ আবেগাপ্লুত হন এবং তাদের দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২২ এপ্রিল কাতার চ্যারিটি সংস্থার আন্তর্জাতিক অপারেশনস সেক্টরের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াফ আবদুল্লাহ আল হাম্মাদির সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের কয়েক লাখ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর জন্য প্রযুক্তি শিক্ষা চালু করার জন্য কাতার চ্যারিটির সহায়তা কামনা করেন। তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক দক্ষতার মতো উদীয়মান প্রযুক্তি শেখার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কথা তাকে জানান। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত শিখতে পারে। তারা দ্রুত এই দক্ষতাগুলো অর্জন করবে।’ এই আহ্বানের জবাবে কাতার চ্যারিটি প্রধান উল্লেখ করেন, কাতার চারিটি সংস্থা ইতোমধ্যেই কয়েকটি মাদ্রাসাকে দক্ষতা এবং জীবিকা নির্বাহের কর্মসূচিতে সহায়তা করেছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২২ এপ্রিল কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বিষয়ক সদ্য মেয়াদোত্তীর্ণ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নবায়ন এবং বাংলাদেশে প্রস্তাবিত স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কারিগরি বিষয় নিয়ে কাজ করার সম্মতি দেয় কাতার। বৈঠকে কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই এবং তা অব্যাহত রাখব। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার সরকার কাতার থেকে আমদানিকৃত এলএনজি আমদানি ব্যয়ের ২৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দীর্ঘদিন পরিশোধ করেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৮ মাসে সব দেনা পরিশোধ করেছে। ফলে কাতারের সঙ্গে এলএনজি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়নে সম্মতি আদায়ও সম্ভব হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় দোহায় আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে একটি বেসরকারি ব্যবসায়িক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে বক্তৃতাকালে তিনি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে প্রচুর সম্ভাবনাময় একটি আশ্চর্যজনক দেশ। নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের সাত রাজ্যের সমুদ্রে প্রবেশের সুযোগ নেই। যদি তাদের সমুদ্রে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ শিক্ষিত তরুণদের হাতে প্রযুক্তি থাকা অবস্থায় একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে পারে।’ তিনি বিদেশী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানান এবং এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ এপ্রিল, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ : রোহিঙ্গা ইস্যু’Ñ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করার জন্য ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা ২৩ এপ্রিল স্পেস এক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশে স্পেস এক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা শীঘ্রই চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত পর্বের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। লরেন ড্রেয়ার বলেন, ‘আমরা প্রায় শেষ রেখায় পৌঁছে গেছি। আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি যে, মে মাসের মধ্যে প্রযুক্তিগত উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে।’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি (স্পেস এক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা চালু হতে যাওয়া) একটি বড় খবর। মানুষ দিন গুনছে। সময় এলে আমরা তা উদযাপন করব বড় পরিসরে।’
প্রধান উপদেষ্টা ২৩ এপ্রিল কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আবদুল রহমান বিন হাসান আল-থানির সঙ্গে এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তাদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা জানান। যেখানে তারা সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। উল্লেখ্য, এর আগে কাতার তিন বছর পর পর বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন করে সেনাসদস্য নেওয়ার কথা জানায়। প্রধান উপদেষ্টা কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রীকে এই সেনাসদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। ওই একই দিন প্রধান উপদেষ্টা কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ ফয়সাল বিন আল থানির সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
২৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা দোহায় ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথোপকথন: একটি রূপান্তরিত বিশ্বে যুব নেতৃত্বকে শক্তিশালীকরণ’Ñ শীর্ষক এক ফায়ারসাইড চ্যাটে যোগ দেন। এদিন রাতে তিনি কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, আপনারা এ সুযোগ নিতে পারেন। বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরেছে এবং তা বড় পরিসরে। আমরা আপনাদের অংশীদারিত্ব চাই।’ তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের জানান, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
২৩ এপ্রিল রাতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় বিদেশী কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে অংশ নেন। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মধ্যে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ হতে চাই।’ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিনিয়োগকারীরা উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং পর্যটন, বিশেষ করে কক্সবাজারের রিসোর্ট জোনে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ২৪ এপ্রিল কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ এই ‘তিন শূন্য’ ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম হিসাবে অভিহিত করেন এবং শিক্ষার্থীদের কল্পনা করতে, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেন। ওই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২৪ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার অব্যাহত নেতৃত্বের ওপর আস্থা প্রকাশ করেন এবং চলমান সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে কাতারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়তে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট ও গাজার পরিস্থিতি নিয়েও কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে আলাপ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
২৪ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরের সর্বশেষ অনুষ্ঠান ছিল কাতারের দোহায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। সেখানে তিনি বলেন, প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় উত্তরাধিকার সূত্রে যে ভঙ্গুর অর্থনীতি লাভ করেছিল, তা থেকে আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি তার মূলে আপনারা। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনো আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’ অতঃপর ২৫ এপ্রিল ঘটনাবহুল এই সফর শেষে তিনি সদ্য প্রয়াত ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দানের জন্য কাতারের দোহা থেকে সরাসরি ইতালির রাজধানী রোমে পৌঁছান। এভাবে প্রধান উপদেষ্টা চারদিনব্যাপী কাতার সফর শেষ হয়।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
প্যানেল