ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ফসলের মূল্য কমিশন

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ফসলের মূল্য কমিশন

বর্তমান মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা ফড়িয়া অপসংস্কৃতি বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষিপণ্যের  মূল্য বঞ্চনার চিত্র আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই। বিভিন্ন কৃষিপণ্য সড়কে ফেলে দিয়ে কৃষকের প্রতিবাদ প্রায়ই ঘটে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু কারণ, ফড়িয়াবাজদের সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অবাধ দৌরাত্ম্য। দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে সরাসরি তাদের  কাছ থেকে ধান-চালসহ সব ধরনের রবিশস্য ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষি অঞ্চলভিত্তিক সামাজিক সংরক্ষণাগার ও হিমাগার তৈরি করা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে, মজুত বাড়াতে সরকার প্রতিবছর স্থানীয় বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে। চলতি মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং ৪৯ টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায়ই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। যেহেতু দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল, তাই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানি করে থাকে প্রতিবছর। এর মাধ্যমে সরকার তার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি (ডিজেল) তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। আসন্ন বোরো মৌসুমে উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রায় প্রতিবছরই আমরা একটি সাধারণ অভিযোগ শুনি, বন্যায় ফলন কম, সরবরাহ খরচ বেড়ে গেছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি কম- এরকম নানা ছুতা দেখিয়ে মূলত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিলার ও করপোরেট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। ফলে, কৃষকের ধান ও চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এরপর যদি প্রকৃতি বিরূপ হয়- তবে তো কথাই নেই। প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, সরকার দাম বাড়ালেও নানা শর্তের কারণে সরকারি গুদামে ধান দেওয়া যায় না। ধান সংগ্রহের পদ্ধতিতে কিছু অসংগতির ফলে ভোগান্তির শিকার হন কৃষক। গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা মাপা হয়। ধান ভেজা হলে শুকাতে হয়। ওজনে কম হলে, বাড়ি থেকে  ধান এনে পূরণ করতে হয়। গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, দুই দফা কৃষককে গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। ধানের মূল্য পেতে চেক নিয়ে যেতে হয় ব্যাংকে।
ধানচাল গুদামজাত করার প্রক্রিয়া হওয়া চাই কৃষকবান্ধব। অন্যদিকে কৃষকদের করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রিতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না বিধায় তারা সরকার বিমুখ হচ্ছে। এ সকল বিড়ম্বনা এড়াতে প্রতি ইউনিয়নে সরকার একটি ধান ক্রয়কেন্দ্র খুলতে পারে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়, যা প্রান্তিক কৃষকের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। মিলার ও কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল ক্রয়ে সরকারি নীতিমালায়  ১৫টি শর্ত রয়েছে। এসব জটিলতা এড়াতে দেশের প্রান্তিক কৃষকরা, মৌসুমের শুরুতেই টাকার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করে দেন। কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বাজারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন কোনো আমলা দেশের কৃষি ও কৃষকের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে না পারে।

প্যানেল

×