
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ও তেহরানে মার্কিন দূতাবাস জিম্মি সংকটের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক শত্রুতামূলক। ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালে একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান যখন পারমাণবিক চুক্তি চূড়ান্ত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ট্রাম্প তখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্যোগের বিরুদ্ধে তেহরানকে সতর্ক করেছেন। ট্রাম্প ইরানকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবেন না তিনি, যদি তারা তাদের কার্যক্রম থেকে বিরত না থাকে। ইচ্ছাকৃতভাবে পারমাণবিক চুক্তি বিলম্বিত করার জন্যও তিনি ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রায় কাছাকাছি। যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি জানিয়েছেন, দেশটির সেনাবাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বহিরাগত হুমকির সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কেও খামেনি সতর্ক করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতি হুমকির পাশাপাশি ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, তুরস্ক, বাহরাইনের প্রতিও ইরান সতর্কবার্তা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে সম্ভাব্য যে কোনো সংঘাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ভূরাজনৈতিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান বলেছে, আকাশসীমা বা আঞ্চলিক ক্ষেত্র ব্যবহারসহ ইরানের মাটিতে আক্রমণ শুরু করতে যুুক্তরাষ্ট্রকে যে কোনো ধরনের সহায়তা দেয়া হলে তা একটি শত্রুতাপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হবে এবং ইরান সেই দেশগুলোকে আক্রমণের তালিকায় রাখবে।
ট্রাম্প বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানো এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়গুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইসরাইল এ সামরিক শক্তিকে নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, যদি সামরিক শক্তি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা তা অবশ্যই ব্যবহার করব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সশস্ত্র সংঘাতের চেয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি করতেই তিনি পছন্দ করবেন। মার্কিন ট্রেজারি ডিপারর্টমেন্ট জানায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সহায়তা করার অভিযোগে ৫টি প্রতিষ্ঠান ও ১ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ইরান যাতে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে সেটাই তাদের লক্ষ্য। জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক প্রধান রোজমেরি ডিকার্লো নিরাপত্তা কাউন্সিলে বলেছেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করার এখনই সময়। জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের উপরাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র পড়া আটকাতে আমরা সব ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দিয়ে বলেছে, যদি প্রয়োজন হয়, তবে ইরানের পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ হয়ে ওঠা আটকাতে তারা দেশটির ওপর সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা বেআইনি ও এর ফলাফল উল্টো হবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি চাইলে ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন। উইটকফ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য যে কোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থার মধ্যে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ ইরানকে তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ এবং অস্ত্রায়ন কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। তিনি আরও জানান, বিশ্বের জন্য এটা অপরিহার্য যে আমরা একটি কঠিন, ন্যায্য চুক্তি করি যা টেকসই হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি উইটকফের মন্তব্যকে পরস্পরবিরোধী আলোচনার জন্য অসহযোগী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আমেরিকানদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অবস্থান শুনেছি, যার মধ্যে কিছু পরস্পরবিরোধী। এগুলো সঠিক আলোচনা প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়। তিনি আরও বলেন, আলোচনা সমান ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কোনো চাপ বা কারও অবস্থান চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়। বরং এটি সম্মানজনক পরিবেশে হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাতিল চায় বলে স্টেট ডিপারর্টমেন্ট জানিয়েছে। মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম দাবি করেছেন, ইরানের নিকট ৬টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। তিনি বলেন, তারা এটি ব্যবহার করবে। তারা ইসরাইলকে শেষ করবে। তারা আমাদেরও পিছু নেবে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, পারমাণবিক বোমা অর্জনের লক্ষ্যে ইরান কাজ করছে না। ইরান দাবি করে, তাদের পরমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক নাগরিকদের কল্যাণের জন্য, পারমাণবিক অস্ত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ কার্যক্রম সীমিত করবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ২০১৫ সালে যে চুক্তিটি হয়েছিল, সেটি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন নামে পরিচিত। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের তৎপরতা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাই গত মার্চ মাসে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে ট্রাম্প সতর্ক করেন, ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের তরফে সম্ভাব্য সামরিক হামলার সম্মুখীন হওয়া এড়াতে তিনি চুক্তি করতে চান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, এ আলোচনা ও চুক্তি সইয়ের জন্য ট্রাম্পকে অবশ্যই প্রথমে কোনো সামরিক পদক্ষেপকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি বাদ দিতে রাজি হতে হবে। আবার, ইরান কখনোই জোরজবরদস্তি মেনে নেবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পারমাণবিক কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন। ইরানের বিষয়ে খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওমানে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল ইরান ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম বৈঠক। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, আলোচনায় দুই পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহ দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের এ আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল হলেও আলোচনাটি পারস্পরিক সমঝোতার পথে একটি বড় পদক্ষেপ। উইটকফ আরাগচিকে জানান, ট্রাম্প কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা ঠিকঠাকভাবে চলছে বলেও ট্রাম্প উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রথম পর্বের আলোচনা শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক পরিবেশে হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশি^ক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে এই আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গত ১৯ এপ্রিল ইতালির রোমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পূর্বে ইরান জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান নতি স্বীকার করবে না। আরাগচি জানিয়েছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে সম্ভাব্য উদ্বেগের বিষয়ে আমরা আস্থা তৈরি করতে প্রস্তুত। তবে সমৃদ্ধকরণের নীতি আপোসযোগ্য নয়। আলোচনাটি মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে হবে এবং দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। এবার সম্ভাব্য একটি চুক্তির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠক বসবে। আব্বাস আরাগচি বলেন, আলোচনার পরিবেশ গঠনমূলক ছিল এবং এটি এগিয়ে যাচ্ছে বলা যায়। কারিগরি আলোচনার পর আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকব। তিনি আরও বলেন, এইবার আমরা কিছু মূলনীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভালো সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি। এদিকে ওয়াশিংটনও যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দাবি করেছে। ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আরাগচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ একটি ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী ও বাধ্যতামূলক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন; যাতে ইরান পরমাণু অস্ত্র থেকে মুক্ত থাকে এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের অধিকার অক্ষুণ্ন থাকে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাযানি বলেন, ইতালি চাইলে এই আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে প্রস্তুত, এমনকি কারিগরি পর্যায়েও। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও বলেন, কোনো চুক্তি হলে ইরানের কার্যক্রম তদারকিতে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, যেমনটা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ছিল। ক্রেমলিনও জানিয়েছে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে চলমান অচলাবস্থার কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে রাশিয়া তার ক্ষমতায় সবকিছু করতে প্রস্তুত। বৈঠকটির ঠিক আগ মুহূর্তে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান ইরান সফর করেছেন। আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এ অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারণ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে বোমা হামলার হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প। পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনাকে সৌদি আরব স্বাগত জানায়। কারণ তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তবে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ইরান সফরের উদ্দেশ্য হতে পারে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আপাতত সমর্থন না পাওয়া সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সীমিত হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যে কোনো আলোচনা তখনই ফলপ্রসূ হবে, যদি তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইরানে হামলা চালানোর এখনই সঠিক সময় বলে ইসরাইল মনে করে। কারণ গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা তাদের ঘায়েল করেছে। তবে নেতানিয়াহুকে ট্রাম্প জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক পথকে অগ্রাধিকার দিতে চায় এবং এই মুহূর্তে সামরিক হামলার পক্ষে নয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কিছু অংশ মাটির গভীরে থাকায় বড় আকারের হামলা হলেও তা চিরতরে ধ্বংস করতে পারবে না। শুধু সাময়িকভাবে পিছিয়ে পড়বে বলে পারমাণবিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইলের এমন পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের সংঘাতের সূচনা করবে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ডেকে আনবে। নেতানিয়াহু বলেছেন, এই সংকটের সমাধান হতে পারে দুইভাবে। একটি হলো চুক্তির মাধ্যমে, তবে তা হতে হবে লিবিয়া পদ্ধতিতে; সবকিছু ধ্বংস করে অর্থাৎ আমেরিকানদের তত্ত্বাবধানে সবকিছু বিলুপ্তিকরণ। এবং অন্যটি হলো তারা সময়ক্ষেপণ করবে, আর আমাদের হাতে সামরিক পথ থাকবে। ইরান বলছে, তারা ইসরাইলের সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত এবং হামলা হলে তা কঠোর ও আপোসহীন প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে। এমন পরিকল্পনা আংশিকভাবে চলমান কূটনৈতিক উদ্যোগে অসন্তোষ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টার ফল বলে ইরান মনে করে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি নতুন কোনো চুক্তি হয়, তাহলে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্ত রাশিয়া আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাশিয়া হয়তো ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, যা থেকে অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা শুধু একটি কারিগরি ধাপের বিষয়। ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ সীমার অনেক উপরে, যদিও এখনো অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশে পৌঁছায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে তার মিলিশিয়া সমর্থনের বিষয়টিও তুলতে পারে। যদিও আরাগচি জানান, এই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কেবল পরমাণু ইস্যু নিয়েই কথা বলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমান দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী শামখানি লেখেন, লিবিয়ার মতো পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ বা বিদেশে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহারের মতো কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না ইরান। ইরান আত্মসমর্পণ নয়, ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি করতে এসেছে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল