ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুচিহীন কনটেন্ট

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুচিহীন কনটেন্ট

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত এবং কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শব্দগুলোর একটি হলো ‘কনটেন্ট’। ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার ও সহজলভ্যতার কারণে ‘কনটেন্ট’ এখন আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত শব্দ, ছবি, ভিডিও, অডিও কিংবা অন্যান্য যে কোনো মাধ্যমে নিজের চিন্তা, বার্তা বা তথ্য অন্যের কাছে উপস্থাপন করাই হলো কনটেন্ট। এই কনটেন্ট হতে পারে লেখা, ছবি, ভিডিও বা মিশ্র মাধ্যম। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতির ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে এবং মুহূর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কনটেন্টের সংখ্যাও। তবে প্রশ্ন উঠেছে এই কনটেন্টের মান এবং প্রভাব নিয়ে। আজকের দিনে সামাজিক মাধ্যমে মূলত দুটি ধরনের কনটেন্ট বেশি চোখে পড়ে। একটি হলো ভালো, শিক্ষণীয় ও উপকারী কনটেন্ট। এগুলো মানুষকে সচেতন করে, শিক্ষা দেয়, উন্নতির পথ দেখায় এবং সমাজে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়। অপরদিকে রয়েছে রুচিহীন, অশ্লীল, বিভ্রান্তিমূলক এবং সস্তা বিনোদননির্ভর কনটেন্ট। দ্বিতীয় ধরনের কনটেন্ট দিন দিন ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে, যা সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।অনেকেই এখন কনটেন্ট তৈরি করছে শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে। ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কনটেন্ট। দুঃখজনক বিষয় হলো, এই কনটেন্টের মান ও প্রভাবের দিকে অনেকেই নজর দিচ্ছে না। অধিকাংশের লক্ষ্য কীভাবে বেশি দর্শক, লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট পাওয়া যায়। বিতর্কিত, অশ্লীল, নেতিবাচক বিষয়কে আশ্রয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করলে মানুষ হয়তো অপছন্দ করবে, সমালোচনা করবে, এমনকি গালিও দেবে, তবুও সেই কনটেন্ট দেখবে, শেয়ার করবে। কারণ, সমাজের একটি অংশ এসব অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট দেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। ফলে এ ধরনের কনটেন্টের বাজার বাড়ছে। বিশেষ করে নারীদের অশালীন অঙ্গভঙ্গি, অপ্রাসঙ্গিক পোশাক ও ভঙ্গিমা, শিশু নির্যাতন, সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। এসব কনটেন্টের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের ওপর। এতে তাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং জীবনদর্শন বিঘ্নিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন, নৈতিকতা-ভিত্তিক এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক কনটেন্টের। এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যা মানুষকে সচেতন করবে। আত্মোন্নয়ন, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, মানবিক মূল্যবোধ, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং ধর্মীয়-সামাজিক শিক্ষা সহজভাবে উপস্থাপন করবে। সরকার চাইলে এসব বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে এনে ভালো কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য প্রশিক্ষণ, সুযোগ এবং উৎসাহ প্রদান করতে পারে। এতে ভালো কনটেন্ট নির্মাণের পরিবেশ তৈরি হবে এবং ধীরে ধীরে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। শেষ কথা,  কনটেন্ট নিজে খারাপ নয়। এটি ভালো বা খারাপ হয় আমাদের মানসিকতা ও উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে। কনটেন্টের মাধ্যমে যেমন সমাজ গঠন সম্ভব, তেমনি সমাজ ধ্বংসও সম্ভব। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কোন দিকে এগোব।
কাজি সুমাইয়া
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা

প্যানেল

×