
দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭২ শতাংশই কৃষক। এ তথ্য উদ্বেগজনক। দেশে একদিকে কৃষি জমি কমছে, অন্যদিকে কৃষিকাজে অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। এমন বাস্তবতায় অভিজ্ঞ কৃষকদের অপমৃত্যু দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। অপমৃত্যু অপঘাতের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে হবে। সেজন্য নিতে হবে যথাযথ ব্যবস্থা। এখন চলছে বজ্রপাতের মৌসুম। এপ্রিল-মে থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের মৌসুম হলেও এখন তা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে দেখা যায়। কালবৈশাখীসহ সময়-অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন। ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে বেশি বজ্রপাত ঘটলেও বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর হার বেশি। এর প্রধান কারণ প্রবল জনসচেতনতার অভাব এবং বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত প্রতিরোধক যন্ত্র স্থাপন না করা।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, তালগাছসহ উঁচু বৃক্ষ নিধন, মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, জনঘনত্ব, যত্রতত্র টাওয়ার স্থাপন ইত্যাদি কারণেও বজ্রপাতের প্রবণতা ও মৃত্যুহার বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) এবং লাইটেনিং অ্যারেস্টর (বজ্রপাত নিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের জীবন, গবাদিপশু ও সম্পদ রক্ষা করা যায়। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে, বিশেষত কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা প্রত্যাশিত। জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম জানিয়েছে, বজ্রপাত দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্বে বছরে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে তার অর্ধেকই বাংলাদেশে।
বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ লাগানো হলেও এর সুফল মিলতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়। গাছগুলোকে বজ্রপাত প্রতিরোধের মতো সক্ষম বা বড় হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।
বজ্রপাতে বেশি মৃত্যুহারের জন্য মানুষের অসচেতনাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, বজ্রপাত সম্পর্কে এদেশের প্রান্তিক ও নিরক্ষর জনসাধারণের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে মৃত্যুহার বেশি। ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের সময়ও এদেশের লোকজন খোলা মাঠে কাজ করে, বিশেষ করে হাওড়াঞ্চলের কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়। বজ্রপাতের সময় পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নেয়া, উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকা, বাড়ির জানালা থেকে দূরে থাকা, ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা, বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে দূরে থাকা, পানি থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে নিচু হয়ে বসা, রাবারের জুতো ব্যবহার করা, বজ্রপাতজনিত আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে কৃষকদের বাঁচাতে হলে গ্রামে গ্রামে সচেতনতামূলক টিম গঠন করা চাই। স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে প্রশাসন সহজেই এমন প্রশিক্ষিত টিম গঠন করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন প্রধানত সদিচ্ছা ও সক্রিয় উদ্যোগ। ভালো কাজের অর্থায়নে কখনো সমস্যা হয় না। তাই আর কালক্ষেপণ নয়।