ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরাইলি গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক দায়

শাহমুব জুয়েল

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

ইসরাইলি গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক দায়

ফিলিস্তিনিদের আয়ের প্রধান উৎস জলপাই গাছ। জলপাই তেল উৎপাদনই ফিলিস্তিনবাসীর অনন্য ব্যবসা।  গাজার মাটিতে এখনো অনেক গাছ দৃশ্যমান রয়েছে। যেগুলো ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের জাতি হয়ে গড়ে ওঠারও কয়েকশ’ বছর পূর্বে রোপণ করা হয়েছিল। নাকবার (বিপর্যয়, ১৯৪৮) সময় বহু গাছ কেটে ফেলা হলেও সূর্যের ছায়া ও প্রকৃতির নিয়ামক হিসেবে শক্ত শেকড় হয়ে গেড়ে রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ৭৫ বছর ধরে ইসরাইল দখলদারিত্বের মুখ্য সাক্ষী, প্রকৃতিবন্ধু আর শান্তির আশ্রয়স্থল জলপাই গাছ। এখন ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং বসতি স্থাপনকারীরা এসব গাছ পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেও ক্ষান্ত নয়। পাশাপাশি জলপাইগাছও পুড়িয়ে দিচ্ছে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধে জলপাই গাছ নিধনের দৃষ্টান্ত পরস্পর স্বার্থ ও অন্ধত্বেরই বহির্প্রকাশ মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতি যে কোনো ধর্ম-বর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সেবাব্রত হিসেবেই ভূমিকা রাখে। একথা মানুষের সূক্ষ্ম মননে নাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা আজ অনভিপ্রেত বিষয়।  পশ্চিম তীরে পর্যবেক্ষকরা রিপোর্ট করেছেন যে, গত বছরের ১২ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনের গ্রামে গ্রামে আক্রমণ করছে। কৃষকরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। রাসায়নিক দিয়ে ফসল স্প্রে করে ফল নষ্ট করে দিচ্ছে। এমনকি শত শত জলপাই গাছ উপড়েও ফেলছে। ১৯৪৮ সালের নাকবার (বিপর্যয়) পর থেকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর ৮ লাখের বেশি জলপাই গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলার খবরও শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনীরা খাদ্য ও পানীয় শোধন এবং রান্নার কাজে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে প্রয়োজনের তাগিদে নিজেরাই গাছ কেটে ফেলছে। ইসরাইলি বর্বরতা ও বোমাবর্ষণ এবং অবরোধে বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইল কর্তৃক জ্বালানি, চুলার জন্য গ্যাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চরম দুর্দশা ও সংকটে  নিজেদের জীবন বাঁচাতে ভালোবাসার প্রতীক জলপাই গাছ কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফিলিস্তিনিদের অনেকে কাঁদতে কাঁদতে তাদের জলপাই গাছের ডাল কেটে দিচ্ছেন যাতে অন্তত রান্নার জন্য আগুন জ্বালাতে পারেন। ইসরাইলিরা  প্রকৃতি ও সভ্যতা নিধনে মাতোয়ারা কিন্তু নির্বাক বিশ্বের পরাশক্তি ও মানবতাবাদী সংগঠন। যা সত্যিই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক ঘটনাও বটে। দখলদার বর্বর ইসরাইলি হামলায় শ্বেত ফসফরাস বোমা আতঙ্কেও রয়েছেন ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠী। বছরের পর বছর ধরে বোমা নিক্ষেপ করে বহু জলপাই গাছ পুড়িয়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। ফলে দক্ষিণ লেবাননেও প্রায় ৪০ হাজার জলপাই গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজাতেও একই অস্ত্র ব্যবহার করছে সেনারা। শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রাচীনকাল থেকে জলপাই গাছ সিরিয়া ও লেবাননজুড়েও অপরিসীম আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করছে। কৃষি ও চাষাবাদ  অঞ্চলগুলোর প্রাচীন সভ্যতার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও জলপাই গাছের একাধিকবার উদ্ধৃতি রয়েছে। জলপাই গাছকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়া গ্রিক পুরাণেও জলপাই গাছ শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। একটি জলপাই গাছের গড় আয়ু  ৫০০ বছর প্রায়। দীর্ঘায়ু জলপাই গাছের অস্তিত্ব সংকটের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বও বিলীন হচ্ছে প্রতিদিন।
ইসরাইল নামে কোনো রাষ্ট্রের সূচনা ছিল না। রাষ্ট্রটি  গঠিত হয়েছে মুসলিমদের জমি দখল করে। যা ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে ব্রিটিশ ও সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশাবাদ। ইসরাইল তৈরি হওয়ার পূর্বে পুরো দেশটাই ছিল প্যালেস্টাইন। জোর করে মুসলিম অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে ভূমিস্থলে জার্মানি থেকে আগত উদ্বাস্তু ইহুদিদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে ইহুদিদের সঙ্গে মুসলিমদের কিছুটা সুসম্পর্ক বজায় ছিল। যখন দলে দলে ইহুদিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইসরাইলে আসা শুরু করে তখনই ঝামেলা শুরু হয়। মুসলিমরা নিজেদের বাসভূমি থেকে উৎখাত হতে থাকে। ফলে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে অস্তিত্বের প্রশ্নে আন্দোলন শুরু হয়। মুসলিমরা নিজের বাস্তুভূমির জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসরাইল তথা ইহুদি জনগোষ্ঠী এত সহজে ছেড়ে দেয়নি, অকাতরে এই সশস্ত্র আন্দোলন দমনের নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপে  রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এত বড় একটা ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে গেল দেখে ইসরাইল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ঢুকে নির্মমভাবে  হত্যাযজ্ঞ চালায়। ফিলিস্তিন দেশটার বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীর সংকট থাকায় হামাস বাহিনী সামরিক শক্তি হিসেবে ধরা দেয়। যা খুবই নগণ্য। ইসরাইল ধীরে ধীরে খুব শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হওয়ায় ফিলিস্তিন পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে। কেউ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আরব বিশ্বে ইসরাইল হয়ে উঠেছে ভয়ংকর রাষ্ট্র। ইসরাইলকে নিয়ে সব দেশই ভয়ে আছে। কারণ তাদের যান্ত্রিক  সক্ষমতা এবং সাহস অপরিসীম।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রেরও স্পষ্ট ভূমিকা আছে। ইসরাইলই তাদের প্রকৃত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। তাদের পাশে তারা আছে এবং থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন বলেছিলেন, ইসরাইলের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার আছে, এটাই শেষ কথা। তিনি জোরালোভাবে আরও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইসরাইলের পাশে দাঁড়াবে’ এবং যা কিছু প্রয়োজন তা দেবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলে গিয়ে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে রয়েছে- সেটা আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতেও। পররাষ্ট্রনীতির বদৌলতে বর্তমানেও তারা অবিচল। চীন-রাশিয়া, সৌদি আরব-তুরস্ক-ইরান-ভারত ইসরাইল  প্রসঙ্গে তাদের নিজস্ব গতিপথে রয়েছে। ভাবনার উদ্রেক হচ্ছে মানবতা, সহনশীলতার পরিবর্তে তারা নিজস্ব স্বার্থে অবিচল। এমন মানসিকতা আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ।
ইসরাইল প্রসঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা কী। চারপাশের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক আঞ্চলিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পর্কের রূপ বদলে গেছে। ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে যখন মানবিক বিপর্যয় বিদ্যমান তখন কিছু আরব দেশ ইসরাইলকে সরাসরি না হলেও প্রচ্ছন্নভাবে সহায়তায় লিপ্ত। ফলে প্রশ্ন উঠেছেÑ এই সহযোগিতা কেন এবং কীভাবে ইসরাইলকে আরও আগ্রাসী করে তুলছে?  বিশ্বের ধর্মীয় ও প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিলেও ইরানের হুমকির মুখে ইসরাইলের সঙ্গে গোপন গোয়েন্দা সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়। এছাড়া, বাহরাইন ও মরক্কো আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হয়ে ইসরাইলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে বৈধতা দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে।  
মানবতা আজ বিপন্ন। মনে হচ্ছে ইরানবিরোধী অবস্থানই ইসরাইল-আরব ঘনিষ্ঠতার মূল চালিকা শক্তি। সৌদি আরব, আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো দেশ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতায় বেশি আগ্রহী। তাই জর্দান ও মিসরের মতো দেশ সংঘাত থেকে বিরত রয়েছে। নিজেদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সুবিধা এবং নিরাপত্তা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা ইসরাইলি সামরিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘থার্ডআই সিস্টেমসে’ ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, যা ইসরাইলের অস্ত্রশিল্পকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। পরোক্ষভাবে ইসরাইলের পরাশক্তি ব্যবস্থা এবং  অবস্থানকে ক্রমতর আরও শক্তিশালী করছে। ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশের এসব সহযোগিতা সরাসরি জনসমর্থনের পরিপন্থি। বরং আরব জনগণের বড় একটি অংশ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।  সরকারগুলো সুকৌশলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এসব সম্পর্ক গোপন রাখে বা প্রতীকী প্রতিবাদের মতো নাটকের পটভূমি সম্প্রসারণে ব্যস্ত বলে ধারণা জন্মায়। ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্বিমুখী নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। একদিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি, অন্যদিকে ইসরাইলের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থÑ এই দ্বন্দ্ব আরব বিশ্বের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ ও হটকারিতার বহির্প্রকাশ।  
আরব বসন্ত ও আরবদেশীয় আতঙ্ক হচ্ছে বিপ্লব। যে কোনো সময় রাষ্ট্রীয় ভিত নড়ে যেতে পারে। নিজেদের গোপন কুকর্মগুলো প্রকাশ পেতে পারে। আতঙ্কগ্রস্ত দেশপ্রধানরা সম্পূর্ণ ভীত। কোথাও কোথাও কালার রেভুল্যুশন (ঈড়ষড়ঁৎ জবাড়ষঁঃরড়হ) হয়েছে। যাতে উপড়ে ফেলা হয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রবীজ। তাদের পরিকল্পনাও রয়েছে নানামুখী। কালার  রেভুল্যুশন (ঈড়ষড়ঁৎ জবাড়ষঁঃরড়হ) ইহুদি এবড়ৎমব ঝড়ৎড়ং সম্প্রতি কাজগুলো করছেন। তার মতো বিশ্বে তাদের বহু লোক রয়েছে। বিশ্বে আধিপত্য শুধু নয় বিশ্বব্যবস্থাকে গ্রাস করতে তাদের অবস্থান হচ্ছে  জিরো টলারেন্স।
চীন ব্যবসাবান্ধব দেশ। সম্প্রতি তারা ধীরে চলো নীতিতেও অটল। রাষ্ট্র-জনগণ ও ব্যবসা চুক্তিকরণে ব্যস্ত। আধিপাত্য বিস্তারের চিন্তা মাথায় থাকলেও ব্যবসা এবং লাভজনক নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক আহমেদ আবৌদুহ বিবিসি মুন্ডোকে বলেছেন, এই নতুন চীনের পশ্চিমা-বিরোধী এবং ঔপনিবেশিক-বিরোধী আখ্যানে ‘ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের মধ্যে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতাই প্রতিফলিত হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যেদিকে তা থেকে তারা বিপরীতে মোড় নিলেও ইসরাইল প্রশ্নে তাদের নীরবতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক খেলায় চীন ও রাশিয়া একীভূত। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হচ্ছে মার্কিনীরা। এ প্রশ্নে বিপরীতে মোড় এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করলেও ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণ ইসরাইলের প্রতি তারা নমনীয়। যদিও জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক মার্ক কাটজ বলেছেন, ‘সেই সময় মনে হচ্ছিল ইসরাইলের সমাজতান্ত্রিক ঝোঁক ছিল, যখন সমস্ত প্রতিবেশী দেশ ইউরোপীয় উপনিবেশ ছিল।’ তদুপরি ইসরাইল একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ১৯৫০-এর  মাঝামাঝি সাবেক সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ আরব জাতীয়তাবাদের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। তাদের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে পরাশক্তি প্রতিযোগিতায় কিন্তু শীতল মনোভাব প্রকাশ পায় ইহুদিদের অভিবাসনে। সোজাকথা হচ্ছে তারা ফিলিস্তিনকে এতটা সমর্থন করছে না,  যা মার্কিন সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করবে। সমনীতি অনুসরণ দেখালেও মূলত ইসরাইলকেই পছন্দ করছে। পছন্দ-অপছন্দের কাজগুলো সামলে নিজেদের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ইসরাইলকে পাশে চায়।
অর্থনীতি ও নিজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জনে ডার্ক সাইকোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরস্পর বিভেদ থাকবে কিন্তু বাণিজ্য সুবিধা ও আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো বাধা তৈরি হবে না। ইহুদি তথা ইসরাইল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অনেকেই সম্পর্ক রাখছে না কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা ও উন্নয়নে পরস্পর গোপনীয় সম্পর্ক বজায় রাখছে। বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের এ ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান। চাহিদা ও চিন্তার প্রসারতা নির্র্ণয়ে বহুমুখী মতাদর্শ কিংবা বহুত্ববাদী ধারণা থাকলেও আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে এক ও অভিন্নতা আছে। অংশীজন ও গণমানুষের সামনে উন্মুক্ত মতামত থাকে। কিন্তু জোগান ও সমৃদ্ধি এবং উচ্চাভিলাসিতায় দীর্ঘসূত্রতা নেই। তখন  পরিচয়টা হচ্ছে খুব আত্মসচেতন ও সূক্ষ্মদর্শী।  
ইসরাইল বিশ্বে মৃদু পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ব্যবহারে স্বয়ংক্রিয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তারা তাদের অবস্থান ও ইন্টেলিজেন্স আধিপত্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরাইল রাষ্ট্রের পরিধি বাড়াতে ফিলিস্তিনের ওপর উপর্যুপরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। যা শুধু মানবতাবিরোধীই নয় বরং চরম লঙ্ঘনও। এক্ষেত্রে বিশ্বের মানবতাবোধে বিশ্বাসী মানুষ ফুঁসে উঠলেও মানবতাবাদী সংগঠনগুলো দায়সারা গোছের বক্তব্য উপস্থাপন ও ভূমিকা রাখছে। তাদের শক্তি-সামর্থ্যরে কাছে বিশ্ব কি নিরুপায়? এ প্রশ্নের আগে মানবতা ও মানুষের জীবন। মানুষ কখনো মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারে না; সুতরাং বিশ্ব নেতৃত্ব, মানবতাবাদী সংগঠন ও দেশগুলোর এগিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, জননিরাপত্তা এবং থুবড়ে পড়া রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে পুনরুদ্ধার করতে নানামুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন।    
লেখক : শিক্ষক

প্যানেল

×