ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

শিশুর নিরাপদ দুধপান

বাবুল কান্তি দাশ

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

শিশুর নিরাপদ দুধপান

জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় মাস যে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে তাদের ডায়রিয়া সহ অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। মায়ের দুধকে সদ্যোজাতর প্রথম ভ্যাকসিন বলা যায় অনায়াসে। বিশেষ করে শিশু ভূমিষ্ঠ হবার কিছুক্ষণ পর মায়ের যে হালকা হলদেটে দুধ নিঃসৃত হয়, তাতে আছে নানান ধরনের অ্যান্টিবডি যা সদ্যোজাতর রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আর পুষ্টির দিক থেকে মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই। তাই শিশুর দুধপানের বিষয়ে অধিক যত্নশীল, নিরাপদ, শঙ্কাহীন ও অনুকূল পরিবেশ থাকা বাঞ্ছনীয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে শিশুর প্রতি অবিচার করা হবে। আমাদের মায়েরা যাতে করে নিরাপদে নিশ্চিন্তে এবং সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে সদ্যোজাতর মুখে অনায়াসে  স্তন তুলে দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজন ব্রেস্ট ফিডিং কেন্দ্র। বাস স্ট্যাণ্ড থেকে শুরু করে শপিং মল সহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রাখা উচিত সুস্থ সুন্দর পরিবেশের ব্রেস্ট ফিডিং কেন্দ্র। মায়েদের যেন বিব্রত হতে না হয়।
নিশ্চিন্ত মনে সাবলীলভাবে মা যেন শিশুকে স্তন পানে নিয়োজিত থাকতে পারেন। মাস ছয়েকের একটি শিশু যুবতী মায়ের কোলে থেকে থেকে কেঁদে উঠছিল। পাশের এক মহিলা বলে উঠলেনÑ ওর বোধহয় খিদে পেয়েছে। বাচ্চার যে খিদে পেয়েছে, যুবতী মাও তা বুঝতে পেরেছেন। কিছুক্ষণ আগেই খিদে মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ভিড়ের জন্য তিনি সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। ভিড় দেখে অসহায় মুখে এবার তিনি বাচ্চাকে খাওয়াতে চলে গেলেন বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে। আঁচল ফেলে সেখানেই তিনি শিশুকে দুধ খাওয়ালেন। ঘরের বাইরে কোলের শিশুকে খাওয়ানো নিয়ে কম বেশি সব মাকেই এই এক সমস্যায় পড়তে হয়। শত শত চোখের আড়ালে বাচ্চাকে খাওয়ানো যে কী কষ্টকর, তা মা মাত্রই জানেন। পুরুষদের কুদৃষ্টি মায়েদের  অস্বস্তিতে ফেলে। গুটিয়ে নেন মা নিজেকে। এতে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুর যথাযথ দুগ্ধপান। একটা সময় ছিল যখন নারীরা বেশির ভাগ সময় গৃহের অভ্যন্তরেই সময় কাটাতেন। তখন শিশুদের মায়েরা বুকের দুধ খাওয়াতেন। এতে তাদের কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। গৃহের কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় সুযোগ মতো ইচ্ছানুযায়ী শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারতেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নারীরাও এখন কর্মসূত্রে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। অফিস-আদালতে বলতে গেলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা। তাদের শিশুটিকে উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশে বুকের দুধ খাওয়াতে চরম দুর্ভোগ ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। শিশুদের দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম। এর ব্যত্যয়ে শিশুর শারীরিক-মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আসুন আমরা মায়েদের সম্ভ্রম রক্ষায় মনোযোগী হই।

বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে

প্যানেল

×