
যুগে যুগে নানা উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও অনেক অবদান রেখেছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সক্রিয়তা কিছুটা থমকে যায় মাতৃকালীন সময়ে। এ সময়টা একজন নারীর জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সে চ্যালেঞ্জ আরও বহুগুণ বেড়ে যায় যখন কোনো মা তার বাচ্চাসহ ঘরের বাইরে বা কোনো কর্মস্থলে যেতে হয়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক পরিবেশ না থাকায় একটা দীর্ঘসময় বাচ্চাকে স্তন্যদানে বিরত থাকতে হয়, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের সকল পাবলিক প্লেস, যেমন সরকারি অফিস, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, শপিংমল, রেস্টুরেন্টসহ বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এই আইন শুধু কাগজে-কলমেই লিপিবদ্ধ থাকে। তা প্রয়োগের বেলায় দেখা যায় আমাদের সমাজের অনাগ্রহতা। কিছু পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আবার কোথাও কোথাও দেখা মিলে পরিত্যক্ত এবং তা ব্যবহারে আমাদের সমাজের উদাসীনতা। কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে অন্য মানুষ বসে থাকার দৃশ্য। আবার বেসরকারি কর্মস্থলগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও বেশিরভাগ অফিস বা কল-কারখানায় তা দেখা মেলেনি।
এমতাবস্থায় অবস্থায় মায়ের কোলে থাকা শিশুটি ও মায়েদের বিব্রতবোধ করতে হয়। আবার অনেকেই পাবলিক প্লেসে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে বুকে দুধ খাওয়ান। কেউ কেউ শিশুর কান্না দূর করার জন্য হাঁটাহাঁটি বা কিছু খেলনা দেখান। এভাবেই দীর্ঘক্ষণ ধরে বাচ্চাকে স্তন্যদান থেকে বিরত থাকেন, যা নবজাতক বাচ্চার জন্য জন্য খুবই হানিকর।
ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু খর্বকায়, ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম এবং ১৪ শতাংশ শিশু কৃশকায় তথা লম্বার তুলনায় ওজন কম। যার একমাত্র কারণ শিশুকে যথাসময়ে মাতৃদুগ্ধ পান না করানো। অর্থাৎ শিশুর পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে একটি নিরাপদ ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় স্থাপন করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের উচিত এ ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে শিশুর বাবাকে। তিনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক পরিবেশে ব্যবস্থা করবেন এবং বিভিন্নভাবে স্তন্যদানকারী মাকে সহায়তা করবেন। একটি সুস্থ জাতি নিশ্চিতকরণে আমাদের জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সমাজের সকলের উচিত স্তন্যদানকারী মায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তবেই তো আমরা সভ্য জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব।
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা থেকে
প্যানেল