
মাতৃত্ব যেমন আশীর্বাদ, তেমনি এটি এক বিশেষ চ্যালেঞ্জও বটে। বিশেষ করে সন্তান জন্মের পর মাতৃদুগ্ধদানের মতো স্বাভাবিক একটি বিষয় আজও আমাদের সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত। এটি এক নীরব বিড়ম্বনা, যা প্রতিদিন মুখ বুজে সহ্য করেন হাজারো মা।
মাতৃদুগ্ধ শিশুর প্রথম ও প্রধান খাদ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কর্মজীবী নারীরা যখন অফিস বা কর্মস্থলে থাকেন, তখন এই মৌলিক চাহিদা পূরণের কী সুযোগ আছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর উত্তর হবে না। বাংলাদেশে এখনো বেশিরভাগ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধদান কক্ষ বা ব্রেস্টফিডিং কর্নার নেই। ফলে অনেক মাকে বাধ্য হয়ে টয়লেট কিংবা কোনো অপ্রতুল স্থান বেছে নিতে হয়, যা একদিকে অনিরাপদ, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর।
উন্নত বিশ্বে এ বিষয়ে সচেতনতা অনেক বেশি। অনেক অফিসেই ব্রেস্টফিডিং সেন্টার রয়েছে, যেখানে মা নির্জনে ও স্বস্তির সঙ্গে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন। এমনকি আইন অনুযায়ী ন্যূনতম সময় ও সুযোগও নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশেও শ্রম আইনে মা-বান্ধব পরিবেশ গঠনের কথা বলা আছে, তবে তা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।
এখানে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও একটি বড় বাধা। জনসমক্ষে শিশুকে দুধ খাওয়ানোকে এখনো অনেকে অস্বস্তির চোখে দেখেন। অথচ এটি একেবারেই স্বাভাবিক ও মানবিক একটি বিষয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না ঘটলে সমাজে মা ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সুতরাং এখনই সময় নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একযোগে আরও সচেতন, সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হওয়ার। প্রতিটি কর্মস্থলে মাতৃদুগ্ধদান উপযোগী কক্ষ স্থাপন, মা-বান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সংবেদনশীলতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, একজন মায়ের সম্মান এবং একটি শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা মানেই একটি উন্নত জাতির ভিত্তি গড়ে তোলা।
মল্লিকপুর, সুনামগঞ্জ থেকে
প্যানেল