ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

কর্মজীবী মায়ের অধিকার

সিদ্দিকা ফেরদৌস তরু

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

কর্মজীবী মায়ের অধিকার

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা নারীর কিছু চরণে আমরা দেখতে পাই একটা সমাজ, একটা পরিবার, একটা দেশের উন্নয়ন, কল্যাণ, অংশগ্রহণে নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়। একজন নারী বধূ, মাতা, কন্যা বিভিন্নরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে পরিবারের, সমাজের, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। কাজেই বর্তমানে নারীদের ছোট করে বা অবহেলা করার কোনো অপশন নেই। নারীকে এসব ভূমিকা পালন করতে যেয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী মায়েদের। পরিবার সামলিয়ে বাইরের কাজ করতে হয়। কিন্তু কর্মজীবী মায়ের বড় সমস্যা বা বিড়ম্বনা দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার জন্য শিশুকে স্তন্যদান করতে পারে না। যার ফলে ওই কর্মজীবী মায়ের সন্তানের জন্য বিচলিত থাকার কারণে কর্মে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। এর ফলে কর্মস্থল ও শিশু উভয়েরই ক্ষতি হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
স্তন্যদান নিয়ে কর্মজীবী মায়েরা বড় বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। শিশুকে এক বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে স্তন্যদান করা সম্ভব হয় না। ফলে শিশুকে বাইরের কৃত্রিম খাবার খেতে দিতে হয়, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি সদ্য প্রসবকারী মায়ের জন্য ভয়ংকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে। সুতরাং এরকম অবস্থা মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে। নারীকে সত্যিকার্থে অংশগ্রহণ বা কাজে লাগাতে চাইলে অবশ্যই মায়ের এ বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে হবে। তবে আশার কথা সরকার কর্মজীবী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন অফিস আদালতে শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করার নির্দেশনা আছে। তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর সেকশন ৪৬-৫০ পর্যন্ত কর্মস্থলে মা ও শিশুর দিবা-যত্ন বিষয়ে উল্লেখ আছে। আবার অনেক সময় দেখা গেছে বেশির ভাগ অফিস সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে। যার ফলে কর্মজীবী মায়েরা স্তন্যদানের ক্ষেত্রে বিব্রত ও বিড়ম্বনায় পতিত হয় যা দেশ এবং মা ও শিশুর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই ক্ষেত্রে নারীকে সমকক্ষ ও দেশের উন্নয়নে অবশ্যই স্তন্যদায়ী মাকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শিশুকে দেখাশোনা ও স্তন্যদানে সুযোগ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মায়েরও কিছু ভূমিকা আছে যেমন- পরিকল্পনা করে ছুটি নিতে হবে এবং অফিস ছুটির পরপরই যেটুকু সময় পাওয়া যায় সন্তানকে দিতে হবে। কারণ স্তন্যপানে মা ও শিশুর মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তাই কর্মস্থল, সমাজ, পরিবার পাশে থেকে কর্মজীবী মায়ের এ ব্যাপারে অস্বস্তি ও বিব্রতবোধ দূর করতে হবে। কারণ মাতৃদুগ্ধপানকারী শিশুর বিকাশের স্বার্থে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাতৃদুগ্ধ পান করার ব্যবস্থা থাকলে নারীর মধ্যে নিজের ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার দৃঢ়তা ও আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
গাইবান্ধা থেকে

প্যানেল

×