ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিন

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২২ এপ্রিল ২০২৫

জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

রাজধানীর লাখ লাখ যাত্রীর যুগান্তকারী সুবিধা এনে দিয়েছে মেট্রোরেল। উন্নত দেশগুলোতে বহু আগেই মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানেও আছে মেট্রোরেল। সেগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও মেট্রোরেল হয়ে উঠেছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন। রাজধানীর লক্কড়ঝক্কড় ও জরাজীর্ণ বাসের বিপরীতে জাপানে তৈরি মেট্রোরেলের কোচগুলো অত্যাধুনিক। তিনতলা মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি (এক্সকেলেটর) ও লিফট রয়েছে।

ট্রেন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি)। সব মিলিয়ে যাত্রীরা মেট্রোরেলে পাচ্ছেন আরামদায়ক ও দ্রুতগতিতে যাত্রার সুযোগ। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা, যেটা ঢাকায় অন্য কোনো পরিবহন দিতে পারছে না। বর্ষায় জলজটে বাস-অটোরিক্সা আটকে থাকলেও মেট্রোরেল থাকে চলমান। বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমে ঢাকায় স্থবিরতা নেমে এলেও মানুষের সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হয়েছে মেট্রোরেল।

উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের জন্য দিয়াবাড়ি ও মতিঝিল সাবস্টেশনে জাতীয় গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে বিকল্প সংযোগও। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় হলে ট্রেন পরের স্টেশনে যেতে পারে ব্যাটারির সাহায্যে। এই ট্রেন দুই দিকে চলতে পারে, ঘোরানোর প্রয়োজন হয় না।
এত সুবিধা মেট্রোরেলের যে, দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। আরও বেশি মানুষ মেট্রোরেলে উঠতে চাইছেন। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই গণপরিবহন আরও বেশি সংখ্যক মানুষের উপকারে আসতে পারছে না। যারা নিয়মিত চড়ছেন, তারাও আছেন ভোগান্তিতে। মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের পাস বা কার্ডের সংকট মেটাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে স্থায়ী কার্ড বা র‌্যাপিড পাসের সংকট চলছে।

ফলে, কেনার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী কার্ড না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার পাস কিনে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, বর্তমানে মেট্রোরেল প্রতিদিন চার লাখের বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। মোট যাত্রীর প্রায় ৬০ শতাংশ র‌্যাপিড ও এমআরটি পাস ব্যবহার করেন। বাকি ৪০ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন একক যাত্রার কার্ড।
দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার স্থায়ী কার্ডের চাহিদা রয়েছে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এমআরটি বা র‌্যাপিড পাসে যাতায়াত করলে টিকিটের মূল্যে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। এ জন্য স্থায়ী কার্ডের চাহিদা বেশি। স্থায়ী কার্ডে ভ্রমণের ঝক্কিও কম। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করার মতো র‌্যাপিড ও এমআরটি পাস আছে খুব সামান্য। বর্তমানে দেখা গেছে, প্রতিদিনই যাত্রীদের কার্ড কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

টিকিট সরবরাহের বিষয়টি সরকারি দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা পড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তবে তারা নিজেরা র‌্যাপিড কার্ড তৈরি করতে পারে না। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হলো যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে। এখন সামান্য টিকিট কাটতে ভোগান্তি হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেশে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থাকবে এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত হবে কিংবা পর্যবসিত হবে দীর্ঘসূত্রতায়, এটা কোনো ক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না।

×