
অন্তর্বর্তী সরকারের নানাবিধ সংস্কার কর্মসূচির অন্যতম স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক সংস্কার ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। যেমনÑ বিগত সরকারের আমলে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো স্বাস্থ্য খাতেও ঘটেছে বিপুল বাণিজ্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, লুটপাট ও দুর্নীতি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, ডাক্তারদের নিয়োগ ও বদলি, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ডাক্তারদের পদোন্নতি, বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণসহ প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট। এসবের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। এমনকি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এসবের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, যা প্রমাণিত।
আশার কথা এই যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিগত সরকারের বদলি বাণিজ্য ও দলীয়করণ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে যোগ্যতার ভিত্তিতে। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের অ্যাটাচমেন্ট বা সংযুক্তি। ফলে নিশ্চিত হয়েছে চিকিৎসকের উপস্থিতি। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার চিকিৎসককে। ৪৫, ৪৭ ও ৪৮ বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনাধীন। সৃজন করা হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ চিকিৎসকের নতুন পদ। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন ৫ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চলমান। এসবই স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক সংস্কার ও দলীয়করণ প্রক্রিয়ার মূলোৎপাটনে সহায়ক হবে আগামীতে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় সর্বত্র ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দলীয়করণের বিষয়টি সুবিদিত। এ রকম অব্যবস্থার বিষয়টি চরমভাবে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশেও সংঘটিত করোনা অতিমারি চলাকালীন। এই অবকাশে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে বহুকথিত শাহেদকাণ্ডের নামে ভুয়া হাসপাতাল ও ডাক্তার সাবরিনা দম্পতির মতো ভুয়া সনদদাতা প্রতিষ্ঠান।
সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনে সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর এখন এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তন তথা সংস্কারের। দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান অগ্রগণ্য। এমডিজি ও এসডিজিতে যতটা লক্ষ্য সন্নিবেশ হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আরও একটি প্রধান সমস্যা বিনিয়োগ। দেশের জাতীয় আয়ের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। এ সামান্য বরাদ্দও ব্যয় করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এত কম বরাদ্দ দিয়ে আর যাই হোক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত করা অসম্ভব। অথচ শ্রীলঙ্কা স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের নিরিখে আমাদের চেয়ে ৪ গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। সে অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার করতে হলে প্রথমে জরুরি সুশাসন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। যারা জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন করবে।
প্যানেল