ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

নারীর সমান অধিকার

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ২১ এপ্রিল ২০২৫

নারীর সমান অধিকার

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কার কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-এর ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১০ সদস্যের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে কমিশনের সদস্যরা মোট ৪৩টি বৈঠক করেন বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। ঢাকার বাইরেও অন্যান্য জেলায় কিছু পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতাই প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের বাস্তবতাই এমন যে, নারীর সমানাধিকার ও অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কোনো কোনো মহল।
গত শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নারীর অধিকার রক্ষায় বিশদ সুপারিশ এবং করণীয়সহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। ‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’ শিরোনামে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এমন কিছু সুচিন্তিত ও দূরদর্শী সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা ইতোপূর্বে কোনো সরকারের আমলেই করা হয়নি। সেজন্য নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশনের সদস্যরা দেশের সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের আন্তরিক ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তদুপরি সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে তিন ধাপেÑ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় এবং দীর্ঘ নারী আন্দোলনে আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের ভিত্তিতে। যে কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন করা যায় সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধরনের নারীর বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি। অন্তত আইনটি তৈরিতে এখনই উদ্যোগ নিতে সব সম্প্রদায়ের জন্য ঐচ্ছিকভাবে প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের নারী উন্নয়ন, অধিকার, সমতা প্রতিষ্ঠা, উত্তরাধিকার আইনের সংস্কারসহ নারী নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত সিডও সনদে অনুস্বাক্ষর করলেও অতীতের কোনো সরকারই তা আমলে নেয়নি। ফলে নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এর বাইরেও রয়েছে নারীর প্রতি সংহিসতা, হয়রানির প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা, ধর্ষকের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণ ধারায় সংস্কার আনা, যে কোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ এনে নারী বিদ্বেষী বয়ান বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, সর্বোপরি নারীর প্রতি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি গ্রহণ করা। এটা ঠিক যে, রাতারাতি বা একসঙ্গে সব সুপারিশ বাস্তবায়ন ও আইনে পরিণত করা যাবে না। তবে পর্যায়ক্রমে হলেও যত দ্রুত এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় সেই লক্ষ্য অর্জনে একযোগে কাজ করতে হবে সরকারসহ সবাইকে।

প্যানেল

×