
পশু স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রাণী চিকিৎসকরা সর্বদা অসুস্থ পশুকে সুস্থতায় রূপায়ন করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসার জন্য ছুটে যায় প্রান্তিক খামারি এবং মালিকদের কাছে। দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান এবং খামারিদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলেই প্রতি বছর নিরাপদ আমিষের চাহিদা পূরণ হয়।
ভেটেরিনারিয়ানরা শুধু প্রাণীদের সেবা দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়নি, আবিষ্কার করেছেন বিভিন্ন ধরনের টিকা। বিগত সময়ে করোনা মহামারি, সোয়াইন ফ্লু, নিপাহ, র্যাবিস, অ্যানথ্রাক্স, মার্স, সার্স এসব মহামারির একমাত্র উৎস ছিল প্রাণী। এছাড়াও অনেক ভাইরাসঘটিত জুনোটিক রোগ রয়েছে যা মানুষ এবং প্রাণী উভয়েই ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত মানব কল্যাণের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও রক্ষায় ভেটেরিনারিয়ানরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষিত না থাকলে মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর ১ বিলিয়নের বেশি মানুষ বাহক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং প্রায় ১ মিলিয়ন লোক মারা যায়। অধিকাংশ সময় আমরা দ্রুত বাহকের জীবনচক্র শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে থাকি। তাই যথাযথ রোগ দ্রুত শনাক্ত করতে পারি না।
উদ্যোক্তা নির্ভর ও সম্ভাবনাময় এই বিভাগটিকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের প্রতিটি দিন ২৪ ঘণ্টা প্রান্তিক পর্যায়ে পশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য দ্রুত হাসপাতাল চালু করা প্রয়োজন। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার পশু হাসপাতালগুলো ছুটি থাকায় জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দ্রুত ডাক্তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই বিভাগটিকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এছাড়াও মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু হওয়ায় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে এই সেবা। দেশের প্রতিটি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের জন্য নেই পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল। তাই ব্যাহত হচ্ছে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিটি হাসপাতালে আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন, এক্সরে মেশিন ও পরীক্ষাগারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হলে এটি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে।
বিগত সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের যৌথ সমন্বয়ে টিকা কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল। এতে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ এবং পিপিআর এর পরিমাণ অনেকাংশে কমে গেছে। নিয়মিত সময়ে টিকা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারলে এসব মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করে প্রান্তিক পর্যায়ে এই সেবা পৌঁছাতে পারলে নিরাপদ আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। অন্য দেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত প্রাণী দিয়েই আমিষের চাহিদা মেটানো যাবে। ভেটেরিনারিয়ানদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল ধরনের প্রত্যাশিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভেটেরিনারি সেবাকে উন্নতির মডেলে রূপ দেয়া প্রয়োজন।
লেখক : শিক্ষার্থী, গণবিশ্ববিদ্যালয়, সাভার
প্যানেল